অস্বাস্থ্যকর: হাওড়া স্টেশন চত্বরে ভিড়ের মধ্যেই চলছে ধূমপান। নিজস্ব চিত্র
শহরকে তামাকমুক্ত করতে মঙ্গলবার এক আলোচনাসভার আয়োজন হয়েছিল। এ দিনের অনুষ্ঠান-মঞ্চে মূল বক্তাদের দু’জনের অনুপস্থিতিতে বোঝা গেল যে এ সংক্রান্ত আইন থাকতেও তা কার্যকর করার সদিচ্ছার অভাব ঠিক কোথায়। চিকিৎসকদের তরফে তিন জন উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধি। অথচ বক্তার তালিকায় নাম থাকা ওই দু’জন এ বিষয়ে আরও আলোকপাত করতে পারতেন বলেই মত উদ্যোক্তাদের। ধূমপান এবং তামাক সেবন বিরোধী আইন কার্যকর করতে স্বাস্থ্য ভবনের অনীহাও বোঝায় অসুখ কত গভীরে।
ষোলো বছরেরও বেশি আগেই সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়েছে সিগারেটস অ্যান্ড আদার টোব্যাকো প্রোডাক্টস অ্যাক্ট, সংক্ষেপে ‘কোটপা’। ২০০৩ সাল থেকেই দেশে সেই আইন কার্যকরও হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সেই আইন বলবৎ করার সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের।
ওই আইনের চার নম্বর ধারা অনুযায়ী, জনবহুল এলাকা ছাড়াও হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সরকারি দফতরে ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের সেবন নিষিদ্ধ। চিকিৎসকদের মতে, ক্যানসার রুখতে রাজ্যে অবিলম্বে কোটপা কার্যকর করতে আইন লঙ্ঘিত হলে জরিমানা ধার্য করা উচিত বলে মত চিকিৎসকদের।
ক্যানসার রোধে আইন ভাঙলে জরিমানার পক্ষে সওয়াল করেন বক্তারা। সভায় স্বাস্থ্য ভবনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল সেলের নোডাল অফিসার তথা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘সচেতনতা অনেক হয়েছে। দরকার অ্যাকশন। তাই তো নেই!’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দু’বছর আগেই মূল ভবন-সহ স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিটি তলা, ক্যান্টিন, শৌচাগারে ধূমপান বন্ধে নির্দেশিকার যা হাল ছিল এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঠিক ছিল, ৩১ মে তামাক বিরোধী দিবস থেকে স্বাস্থ্য ভবন তামাকমুক্ত হবে। তা পিছিয়ে স্বাধীনতা দিবসে করার কথা ভাবেন দফতরের নীতি নির্ধারকেরা।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশের মতে, কোটপা বলবৎ করতে কমিটিও গঠিত হয়েছিল। স্বাস্থ্য ভবনের সদরে যে গ্লো-সাইন দেওয়ার কথা ছিল, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একাংশের আপত্তি থাকায় পরিকল্পনা হিমঘরে যায়। এই সংক্রান্ত তৈরি গ্লো-সাইন বোর্ড, সাইনেজ এবং লিফলেট গুদামে শোভা পাচ্ছে বলে খবর। আধিকারিকদের একটি অংশের বক্তব্য, ‘‘এক বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য ভবনকে তামাকমুক্ত ঘোষণা করে মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল এবং সরকারি দফতরে ধূমপান নিষিদ্ধের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তা হোঁচট খেল!’’ এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে প্রস্তুতি নিয়েও স্বাস্থ্য ভবন চত্বরকে তামাকমুক্ত করা যায়নি। তবে আমরা আশাবাদী।’’
অনুষ্ঠানের বক্তা ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান, গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২–এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনবহুল এলাকায় পরোক্ষ ভাবে ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ২২.৫ শতাংশ মানুষ। গৃহবধূদের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়ছে তার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ এবং ডেঙ্গি রোধের মতোই তামাক সেবন বন্ধেও কড়া হতে হবে। গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বলা যেমন অপরাধ, তেমনই ধূমপানও। দু’ক্ষেত্রে একই রকম শাস্তি হওয়া উচিত। আইনের যুক্তিগ্রাহ্য বাস্তবায়নে রাজ্য এবং পুলিশকে অনুরোধ করছি।’’
ক্যানসার চিকিৎসক মেহফুজ আরিফের বক্তব্য, ‘‘রাস্তাঘাট জনবহুল এলাকার বাইরে রাখা হয়েছে কেন? জনবহুল এলাকার সংজ্ঞা আইনে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। পাঠ্যসূচি বা কলেজ ক্যাম্পাস ধূমপান মুক্ত ঘোষণা করেও সদিচ্ছা প্রমাণ করা যায়।’’
এ দিন সভায় দুই প্রতিনিধির অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের তরফে ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পুর প্রতিনিধি বলেছেন, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পুলিশের প্রতিনিধি দর্শকাসনে কিছু ক্ষণ থেকে চলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। সেটাও পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি।’’