ফাইল চিত্র।
সাতাশ বছরের এক যুবকের কিডনি প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই রাজ্যের আরও একটি সরকারি হাসপাতালে চালু হল ওই পরিষেবা। এত দিন শুধু এসএসকেএম হাসপাতালে ওই পরিষেবা মিলত। মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হল প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, নদিয়ার বাসিন্দা সুজিত মণ্ডলের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর বাবা অনাদি মণ্ডলের কিডনি। এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এন আর এসের ৯ জন চিকিৎসকের দল গঠন করা হয়েছিল। তাতে ছিলেন ইউরোলজি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তপন মণ্ডল, তাপস মাঝি, আশিস হালদার, অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক মানবেন্দ্র সরকার এবং তাপস ভট্টাচার্য। ছিলেন নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক পিনাকী মুখোপাধ্যায়, অভিষেক মাইতি, মানিক কাটারুকা, তনিমা দাস ভট্টাচার্য। তাঁদের সহযোগিতা করতে এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের ইউরোলজি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দেবাংশু সরকার, অ্যানেস্থেটিস্ট সুজাতা ঘোষ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়োভাস্কুলার সার্জন প্রকাশ সাঙ্কিও এন আর এসে উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ। রোগী কল্যাণ সমিতির প্রতিটি বৈঠকেই উঠেছে বিষয়টি। ওই সমিতির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘এই পরিষেবা চালু হওয়ায় রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মুকুটে আরও একটি পালক জুড়ল। দীর্ঘ দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরও কিডনি প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছে।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় এন আর এস হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অপারেশন থিয়েটার ব্লকে বানানো হয়েছে দু’টি অপারেশন থিয়েটার। একটি ওটি ব্যবহার হবে ‘রিট্রিভ্যাল’ অর্থাৎ দাতার শরীর থেকে কিডনি নেওয়ার জন্য। আর একটি ওটি-তে হবে প্রতিস্থাপন। অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন ‘রিকভারি রুম’ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে বিশেষ আইসিইউ ব্যবস্থাও।
পিনাকীবাবু জানান, বছরখানেক ধরে তাঁদের হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল সুজিতের। তাঁর দু’টি কিডনিতেই সমস্যা রয়েছে। সুজিতের বাবা, ৫৭ বছরের অনাদিবাবুর সঙ্গে ছেলের রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। পিনাকীবাবু বলেন, ‘‘সাতাশ বছরের যুবককে বাঁচাতে ওঁর বাবাকে কিডনি দান করার কথা বোঝানো হয়। তিনি রাজি হন। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জন্য প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়িত করতে একটু সময় লাগল।’’ পিনাকীবাবু আরও জানান, স্বাস্থ্য ভবন থেকে ছাড়পত্র মেলার পরে এ দিন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুজিত এবং অনাদিবাবু, দু’জনেরই অবস্থা এখন স্থিতিশীল।