প্রয়াস: বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে জমা জল সরানোর কাজে ব্যস্ত পুরকর্মীরা। শুক্রবার, খিদিরপুরের রামনাথ পাল রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টি হয়েছিল শহরে। সেই জমা জল সরতে শুক্রবার সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। তবে জল জমে থাকার জেরে সব থেকে বেশি ভোগান্তি হয়েছে খিদিরপুর, মোমিনপুর এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, বিপদ এড়াতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে খিদিরপুর এলাকা বিদ্যুৎহীন করে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে বিদ্যুৎ আসে সেখানে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, খিদিরপুরের ডক্টর সুধীর বসু রোড, ইব্রাহিম রোড, একবালপুর রোড, একবালপুর লেন, ডেন্ট মিশন রোড, মনসাতলা লেন, মৌলানা মহম্মদ আলি রোড শুক্রবারেও জলমগ্ন থাকায় নাকাল হয়েছেন বাসিন্দারা। জলমগ্ন ছিল মোমিনপুরের হোসেন শাহ রোড, রজব আলি লেন, মোমিনপুর রোড এবং নাদিয়ালের বিস্তীর্ণ অংশ। বৃষ্টির পাশাপাশি ভরা কটালের জন্য গঙ্গার জলে ভেসেছিল নাদিয়াল এলাকা। ওই এলাকার প্রায় পাঁচশো পরিবার বৃহস্পতিবারই স্থানীয় আশ্রয় শিবিরে গিয়ে ওঠে। শুক্রবারেও জল না কমায় নাদিয়ালের খালপাড় রোড প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে কথা বলে সেই অবরোধ তুলে দেয়।
এ দিন দিনভর জলমগ্ন ছিল বেহালার মতিলাল গুপ্ত রোড, উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট প্রভৃতি এলাকাও। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শহরে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছিল জিঞ্জিরাবাজারে। কলকাতা পুরসভার বেহালা ফ্লাইং ক্লাব পাম্পিং স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৬ মিলিমিটার। জিঞ্জিরাবাজারে ১৬৬ মিলিমিটার, মোমিনপুরে ১১৭ মিলিমিটার, ঠনঠনিয়ায় ১২১.৮ মিলিমিটার, মানিকতলায় ১২৩ মিলিমিটার, বেলগাছিয়ায় ১১৮ মিলিমিটার, পামারবাজারে ১২০.৫ মিলিমিটার, বালিগঞ্জে ১০১ মিলিমিটার এবং কালীঘাটে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং ভরা কটাল কেটে যাওয়ায় গঙ্গার জলস্তর আর বাড়েনি। এর ফলে শুক্রবার ভোরেই নেমে গিয়েছে আদিগঙ্গার তীরবর্তী এলাকাগুলির জমা জল।
শুধু কালীঘাট এলাকাতেই নয়, সারা শহরে জল জমার জন্য ভরা কটালে গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধি এবং বৃহস্পতিবারের দিনভর তুমুল বৃষ্টিকেই দায়ী করেছেন কলকাতা পুরসভার নিকাশি দফতরের ভারপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক সিংহ। তাঁর কথায়, “ভরা কটালের জন্য গঙ্গার জলস্তর বাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সব লকগেট বন্ধ ছিল। তার মধ্যে ওই দিন শহরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। এই দুই কারণে জমা জল নামতে দেরিই হয়েছে।”
তিনি জানান, শহরে ঘণ্টায় ১৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে সেই জল নিকাশি পথে বেরোতে পারে না। অথচ বৃহস্পতিবার বেশির ভাগ জায়গায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তাঁর আরও দাবি, শুক্রবার বিকেলের পর থেকে শহরের কোথাও জল জমে ছিল না।