পুলিশের হাতে গ্রেফতার কার্তিক যাদব। ছবি: সংগৃহীত
এক বিমা এজেন্টের সঙ্গে স্ত্রী কাজলের সম্পর্কের কথা জেলে থাকাকালীনই পৌঁছে গিয়েছিল রামুয়ার কাছে। জেলে বসেই সেই বিমা এজেন্টকে সরিয়ে দেবার ছক কষেছিল হাওড়ার কুখ্যাত ডন রামমূর্তি দেবার ওরফে রামুয়া। সম্পর্ক আর থাকবে না, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তখনকার মতো ঝামেলা মেটায় স্ত্রী কাজলই। যদিও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে আসার পরই রামুয়া জানতে পারে, বিমা এজেন্ট কার্তিক যাদবের সঙ্গে স্ত্রী কাজলের সম্পর্ক বেঁচে আছে তলায় তলায়। ফের শুরু হয় রামুয়া বনাম কার্তিক রেষারেষি। সেই রেষারেষির মধ্যেই প্রেমিক কার্তিককে সঙ্গে নিয়ে রামুয়াকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে ফেলে কাজল। রবিবার বিমা এজেন্ট কার্তিক যাদবকে গ্রেফতার করার পর সামনে এল রামুয়া খুনের এই মোটিভ।
শুরু থেকেই কুখ্যাত ডন রামুয়ার স্ত্রী কাজল এবং ছেলে সমীরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিল গোয়েন্দাদের মনে। শনিবার রামুয়া খুনে তাঁদের সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকার বিষয়টি সামনে এলেও কী কারণে খুন, তা নিয়ে জারি ছিল ধোঁয়াশা। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় রামুয়ার স্ত্রী এবং ছেলে দাবি করেছিল, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের উপর অত্যাচার চালাত রামুয়া। রামুয়ার জন্য মামলা লড়তে গিয়ে বাড়ছিল আর্থিক সমস্যায়ও। সেই কারণে রামুয়ার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়েই খুনের সিদ্ধান্ত বলে পুলিশকে জানায় তাঁরা। যদিও এই কারণই একমাত্র কারণ কিনা, তা নিয়ে ধন্ধ ছিল পুলিশের মধ্যেও।
শেষ পর্যন্ত কাজল এবং সমীরকে জেরা করেই সামনে আসে বিমা এজেন্ট কার্তিক যাদবের নাম। রবিবারই ব্যারাকপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় কার্তিককে। প্রথমে স্ত্রী- ছেলে, এবার কার্তিক। সব মিলিয়ে রামুয়া খুনে গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ছয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই কার্তিকের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল রামুয়ার স্ত্রী কাজলের। জেলে থাকাকালীনই রামুয়ার কাছে এই তথ্য পৌঁছে দেয় তারই এক শাগরেদ। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি ‘ডন’। তাই জেলে বসেই স্ত্রী-র প্রেমিক কার্তিক যাদবকে খুনের হুমকি দেয় রামুয়া। স্ত্রী কাজলের আশঙ্কা ছিল, জেল থেকে বেরিয়ে কার্তিককে খুন করতে পারে রামুয়া। তাই তখনকার মতো বিষয়টি মিটিয়ে নেয় কাজল। রামুয়াকে কথা দেয়, ওই বিমা এজেন্টের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক সে রাখবে না। রামুয়াও স্ত্রীকে কথা দিয়েছিল, সে-ও আর অপরাধ জগতে ফিরে যাবে না।
আরও পড়ুন: কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা, রামুয়া খুনের পিছনে ছক স্ত্রী-ছেলের
পুলিশ সূত্রে খবর, জেল থেকে বেরিয়েই রামুয়া জানতে পেরে যায়, স্ত্রী কার্তিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এবং নতুন করে সংসার বাঁধার চেষ্টা করছেন। কার্তিক এবং রামুয়া, একে অন্যকে খুনের ছকও কষে ফেলে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। জানা গিয়েছে, রামুয়া খুনে কার্তিককে গোপনে সাহায্য করে তারই স্ত্রী কাজল। এই পরিকল্পনায় সামিল হয়ে যায় ছেলে সমীরও। খুনের জন্য সমীরের তিন বন্ধুকে চার লাখ টাকার সুপারি দেয় কার্তিক যাদব। তার মধ্যে ১ লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: স্ত্রী ও ছেলে মিথ্যা বললেন কেন, প্রশ্ন রামুয়া-কাণ্ডে
এর পরই সমীর যোগাযোগ করে ছোট বেলাকার বন্ধু প্রশান্ত কুমার সিংহ-এর সঙ্গে। প্রশান্ত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাকেই প্রথম খুনের ছকের কথা বলে সমীর। প্রশান্ত এর পর যোগাযোগ করে বিশাখাপত্তনমে তার দুই বন্ধু বিশাল মেনন এবং শ্যামসুন্দর রাওয়ের সঙ্গে। এর পরই বিমানে বিশাখাপত্তনম থেকে তিনজন এসে পৌঁছয় কলকাতায়। সেখান থেকে অ্যাপ ক্যাব নিয়ে সোজা সোদপুরে রামুয়ার ফ্ল্যাটে। বড় রাস্তায় ক্যাবটি দাঁড় করিয়ে তারা ফোন করে বন্ধু সমীরকে। সমীর নীচে নেমে এসে কোলাপসিবল গেট খুলে দেয়। জেরায় সমীর পুলিশকে জানিয়েছে, তিন বন্ধু যখন ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছয়, তখন মদ খেয়ে ঘুমে অচেতন রামুয়া। আগেই রামুয়ার পিস্তল জোগাড় করে রেখেছিল তার স্ত্রী। সেই পিস্তল তুলে দেওয়া হয় ওই তিনজনের হাতে।
এর পর ঘুমের মধ্যেই কানের পাশে রামুয়াকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালানো হয়। গুলির আওয়াজ চাপতে বালিশের মধ্যে দিয়ে গুলি চালানো হয় বলে ধৃতরা জানিয়েছে পুলিশকে। এক রাউন্ড গুলিতেই রামুয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনজন চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে। ওই ক্যাব ধরেই সোজা ফিরে যায় বিমানবন্দর। সেখান থেকে ভোরের বিমান ধরে চম্পট দেয় তারা।
শহরের প্রতি মুহূর্তের হেডলাইন, কলকাতার যে কোনও ব্রেকিং নিউজ পেতে ক্লিক করুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।