কামদুনির ওই স্কুলের রান্নাঘরের চালের এমনই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।
ধু ধু মাঠের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির ছাদে ফাটল। রান্নাঘরের উপরের চাল ঝড়ে উড়ে যাওয়ার পরে আর সংস্কার হয়নি। তার বদলে কোনও রকমে পলিথিন বেঁধে, জোড়াতালি দিয়েই সেখানে চলে স্কুলের শিশুদের মিড-ডে মিল। এমনই দুরবস্থা কামদুনির আইসিডিএস সেন্টারটির। পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সমস্যার সমাধান চেয়ে পাঁচ বছর ধরে প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি।
বারাসত-২ নম্বর ব্লকের অধীনে কামদুনির ওই আইসিডিএস সেন্টারে নাম নথিভুক্ত রয়েছে ৬৭টি শিশুর। প্রতিদিন সবাই না এলেও পড়ুয়াদের মা-বাবারা অবশ্য মিড-ডে মিল নিতে আসেন রোজই। ফলে প্রতিদিনই ৬৭-৭০ জনের জন্য মিড-ডে মিল রান্না করতে হয় সেন্টারের কর্মীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছর ধরে স্কুলের অব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও এ পর্যন্ত পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, স্কুলের ছাদ ফেটে বর্ষায় ঝরঝরিয়ে জল পড়ে। শ্রেণিকক্ষ ভেসে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। সেই জল সরিয়ে তবে সেখানে ক্লাস চলে শিশুদের। আইসিডিএস সেন্টারের তরফে দাবি, এই সমস্যার কথা জানিয়ে ওই ব্লকের বিডিও-র দফতরে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবু অবস্থা যে কে সেই।
স্থানীয়েরা জানান, পাঁচ-ছ’বছর আগে কোনও এক ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল ওই স্কুলবাড়ির রান্নাঘরের চাল। নতুন করে আর চাল বসানো হয়নি সেখানে। বরং রান্নাঘরের উপরে ত্রিপল টাঙিয়েই কোনও মতে কাজ সারা হয়। সেই ত্রিপলও মাঝেমধ্যেই ছিঁড়ে যায়। বর্তমানে ত্রিপল ছিঁড়ে গিয়ে চালের একাংশে বড়সড় ফাটল হয়ে রয়েছে। অভিভাবকেরা জানান, ওই ফাটল দিয়ে ধুলোবালি তো বটেই, রান্না করা খাবারে টিকটিকি-আরশোলা পড়াও অসম্ভব নয়। আর সে ক্ষেত্রে শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও যে রয়েছে পুরো মাত্রায়, তা মানছেন সেন্টারের পরিচালনকারীরা।
আইসিডিএস সেন্টারটির স্কুলবাড়িটির দশাও শোচনীয়। শ্রেণিকক্ষের ছাদের দিকের দেওয়াল ফেটে জল পড়ে। এর ফলে সেই দেওয়ালও কমজোরি হয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা সেন্টারের কর্মীদের। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, আমপানের পর থেকেই কামদুনির ওই সেন্টারের এমন দশা। এ নিয়ে বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় জানান, বারাসত-২ নম্বর ব্লকে ১৩টি আইসিডিএস সেন্টার সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কামদুনি থেকে আমায় দু’-তিন বার জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা সব ক’টি আইসিডিএস সেন্টারকেই সংস্কার করতে চাইছি। তার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে চাওয়া হয়েছে। এমন ভাবে কাজ করা হবে, যাতে আগামী ২৫-৩০ বছর সেন্টারগুলি মজবুত থাকে। ওই সেন্টারগুলি অধিকাংশই খুব পুরনো।’’
যদিও পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ নিয়ে গ্রামে রাজনীতি শুরু হয়েছে। কামদুনির বিজেপি নেতা ভাস্কর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘কামদুনি রয়েছে কামদুনিতেই। তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে দশক পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু উন্নতির বদলে যে অবনতিই হয়েছে, তা গ্রামের আইসিডিএস সেন্টারগুলির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। খোলা চালের নীচে রান্না হচ্ছে, ফাটল ধরা ছাদের নীচে স্কুল চলছে। কোনও বিপদ হলে কে দায় নেবে?’’
যদিও স্থানীয় কীর্তিপুর-২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান নীলিমা মণ্ডলের দাবি, ‘‘বিজেপি রাজনীতি ছাড়া আর কিছু করে না। আমরা বিডিও-র দফতরে চিঠি লিখেছি। নিশ্চয়ই আইসিডিএস সেন্টারের কাজ হবে।’’