ঢিমেতালে চলছে কালীঘাট স্কাইওয়াক প্রকল্পের কাজ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
জট কাটিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল কালীঘাট স্কাইওয়াকের নির্মাণ। কলকাতা পুরসভা এক বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড থেকে কালী টেম্পল রোড হয়ে কালীঘাট মন্দির যাওয়ার যে রাস্তায় স্কাইওয়াক তৈরি হবে, তার নীচে জল ও নিকাশির বহু পুরনো একাধিক লাইন রয়েছে। স্কাইওয়াক নির্মাণের জন্য ওই পথে জলের লাইন সরানো হলেও নিকাশির সংযোগ সরানো সম্ভব হয়নি। কালীঘাটে মন্দির সংলগ্ন নির্মীয়মাণ প্রকল্প চত্বরে বর্তমানে হাইড্রলিক মেশিনের সাহায্যে মাটি খোঁড়া চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, স্কাইওয়াকের জন্য ৩৮টি কংক্রিটের স্তম্ভ তৈরি হবে। যার ভিত প্রায় ৪০ মিটার ভূগর্ভে প্রবেশ করবে। স্কাইওয়াক তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর সূত্রের খবর, যে এলাকায় স্কাইওয়াক তৈরি হবে, সেটি অত্যন্ত ঘিঞ্জি। মাটির নীচে প্রায় চল্লিশ মিটার পাইলিং করতে গিয়ে নিকাশির পুরনো সংযোগ ঠিক রাখাটাই চিন্তার।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে পথে কালীঘাটে স্কাইওয়াক তৈরির কাজ চলছে, তার নীচে ব্রিটিশ আমলের ইটের তৈরি একটি নিকাশি লাইন রয়েছে। এ ছাড়াও নিকাশির আরও কিছু সংযোগ রয়েছে। একাধিক জলের লাইনের গতিপথ বদলালেও নিকাশির গতিপথ বদলানো যায়নি। ফলে স্কাইওয়াক নির্মাণ কাজে নিকাশির লাইন অক্ষত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ।’’ তিনি আরও জানান, এমনও হতে পারে খোঁড়াখুঁড়ির সময়ে মাটির নীচের নিকাশির লাইন ফেটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ মেরামতিও যাতে করা যায়, ভারপ্রাপ্ত তদারকি সংস্থাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক তৈরির কাজ শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে স্কাইওয়াক তৈরির ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। ওই মন্দির সংলগ্ন জায়গায় ২০১৮ সালে স্কাইওয়াক তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়। প্রায় পাঁচশো মিটার লম্বা এবং সাড়ে ১০ মিটার চওড়া এই স্কাইওয়াক তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। স্কাইওয়াকের একটি দিক যাবে কালীঘাট থানার পাশ হয়ে গুরুপদ হালদার রোডের দিকে। আর একটি দিক কালীঘাট মন্দির থেকে সোজা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে নামবে। শুরুতে হকার সমস্যার জন্য বিলম্ব হয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড থেকে কালীঘাট মন্দিরে ঢোকার মুখেই ডান দিকে ছিল কালীঘাট হকার্স কর্নার। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেখানকার ১৮৪ জন হকারকে গত সেপ্টেম্বরে হাজরা পার্কে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে কলকাতা পুরসভা। তার পরেই স্কাইওয়াক তৈরির কাজ শুরু হয়।
যদিও স্কাইওয়াক নির্মাণ শুরু হতেই কালী টেম্পল রোডের ফুটপাতে থাকা হকারেরা চিন্তিত। সুভাষ চক্রবর্তী নামে এক হকারের কথায়, ‘‘তিরিশ বছর ধরে হকারি করে পেট চলে। প্রশাসন থেকে এখনও সরে যেতে বলেনি। তবে আগামী দিনে কী হবে জানি না।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, কালীঘাট থানা থেকে আগেই প্রায় সাড়ে তিনশো হকারের তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুর আধিকারিেকরা জানাচ্ছেন, ওই সংখ্যক হকারদের সবাইকে স্কাইওয়াকে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়।
স্কাইওয়াকে সব হকারদের জায়গা দেওয়া না গেলে তা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। যদিও স্থানীয় বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমারের আশ্বাস, ‘‘স্কাইওয়াক তৈরি হলে নীচে কোনও হকার থাকবেন না।’’