অভিজিতে আপস নয়

চাপে পড়েও বিরোধিতার রাস্তায় জুটা

ছাত্র, শিক্ষক-সহ বিভিন্ন শিবিরের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিজিৎ চক্রবর্তীই স্থায়ী উপাচার্য মনোনীত হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে গিয়েছে। এবং তাতে চাপে পড়ে গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। তবে তারা অভিজিৎ-বিরোধিতার রাস্তা ছাড়ছে না মোটেই। বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী ভাবে বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া হবে, তা ঠিক করতে আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে ওই শিক্ষক সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৪
Share:

বুধবার বিধাননগর কমিশনারেটের সামনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। ছবি: শৌভিক দে

ছাত্র, শিক্ষক-সহ বিভিন্ন শিবিরের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিজিৎ চক্রবর্তীই স্থায়ী উপাচার্য মনোনীত হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে গিয়েছে। এবং তাতে চাপে পড়ে গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা। তবে তারা অভিজিৎ-বিরোধিতার রাস্তা ছাড়ছে না মোটেই। বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী ভাবে বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া হবে, তা ঠিক করতে আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে ওই শিক্ষক সংগঠন।

Advertisement

যাদবপুরে বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি দমনপীড়নের পরে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আচার্য-রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন সেখানকার শ’চারেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। কিন্তু শিক্ষক সংগঠনকেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুগামী বলে চিহ্নিত করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে পাল্টা চিঠি পাঠান উপাচার্য। রাজ্য সরকারকে তিনি আগাগোড়াই পাশে পেয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত চার বছরের জন্য স্থায়ী উপাচার্যও হয়েছেন। জুটা-র সদস্যদের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, অভিজিৎবাবু উপাচার্য-পদে স্থায়ী হয়ে যাওয়ায় তাঁদের সংগঠন এখন বেশ চাপে। এই অবস্থায় অভিজিৎ-বিরোধিতা অব্যাহত রাখার জন্য সাত-পাঁচ ভেবে পা ফেলার পক্ষপাতী জুটা। সংগঠনের এক নেতার কথাতেই সেটা স্পষ্ট। বুধবার তিনি বলেন, “এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। কী ভাবে এগোনো যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্যই বৈঠক ডাকা হয়েছে।”

সেপ্টেম্বরের শেষ দু’সপ্তাহে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বয়কটের জেরে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ডিসেম্বরে সেমেস্টার পরীক্ষা। পুজোর ছুটির পরে যে নিয়মিত ক্লাস হওয়া দরকার, শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেই ব্যাপারে একমত। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যের সঙ্গে অসহযোগিতা, অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে তাঁদের যাবতীয় অভিযোগ সংবলিত শ্বেতপত্র প্রকাশ-সহ নানান কর্মসূচির পরিকল্পনা আছে জুটা-র। উপাচার্যের কাজের পদ্ধতিতে সামান্যতম অসুবিধা হলেও আচার্যের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। যদিও কিছুই এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

Advertisement

১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি তাণ্ডবের বিরোধিতায় জুটা প্রথম থেকেই সরব। তারা বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ তো হয়েছেই। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়েও উপাচার্য ঢিলেঢালা মনোভাব দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে ওই সংগঠন।

জুটা-র সদস্য এক শিক্ষকের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে উপাচার্যের জন্যই। সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁকেই উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি তেমন কোনও পদক্ষেপ করেননি। অন্য এক শিক্ষক বলেন, “আমরা কখনওই পড়াশোনার ক্ষতি চাইনি, এখনও চাই না। কিন্তু এই উপাচার্যের সঙ্গে সহযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না। উল্টে আদালত ও পুলিশের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার যে-পথ তিনি নিয়েছেন, তার বিরোধিতা জোরদার করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়েরই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক, এসইউসি বিধায়ক তরুণকান্তি নস্কর সংবাদমাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে জানান, তিনি অভিজিৎবাবুকে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও অভিজিৎ-বিরোধিতায় মুখর হয়েছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে অভিজিৎবাবুকে বেছে নিয়ে রাজ্যপাল এত মানুষের মতামতকে অবজ্ঞা করেছেন বলে মনে করছেন তরুণবাবু। তাঁর ধারণা, রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তে যাদবপুরের পঠনপাঠন, গবেষণার পরিবেশ নষ্ট হবে।

বসে নেই পড়ুয়ারাও। বুধবারেই এক দল ছাত্রছাত্রী যাদবপুর কাণ্ডের বিরোধিতা করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান। স্থায়ী উপাচার্য-পদে অভিজিৎবাবুর নিয়োগের বিরোধিতা করে এবং ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে স্মারকলিপিও দেওয়া হয় বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের কাছে।

আগাপাশতলা বিরোধিতার এই আবহে অভিজিৎবাবু কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন, ছাত্র-শিক্ষকদের একটা বড় অংশ তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন। উপাচার্য অবশ্য কিছুই বলতে চাননি। ফোন করে জবাব মেলেনি। বাড়িতে গিয়েও বন্দুকধারী পুলিশের প্রহরা টপকে পৌঁছনো যায়নি তাঁর কাছে। দোতলা থেকে অভিজিৎবাবু শুধু জানিয়ে দেন, যা বলার, আগামী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বলবেন।

রাজ্যপালকে চিঠি উদ্বিগ্ন শিক্ষাবিদদের

নিজস্ব সংবাদদাতা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর অপসারণ দাবি করে রাজ্যপাল তথা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি দিলেন সুমিত সরকার, তনিকা সরকার, অনুরাধা চেনয়ের মতো ১৪ জন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন। পত্রলেখকদের বক্তব্য, ওখানে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অস্থায়ী উপাচার্যের যে-সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে কোনও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে উপাচার্য-পদে নিয়োগ না-করলে পঠনপাঠনের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করা যাবে না। তাঁরা মনে করেন, বারবার পুলিশ ডাকা হলে কখনওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে না। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি ঢেলে সেজে শ্লীলতাহানি এবং ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি পীড়নের অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হোক। এ ব্যাপারে রাজ্যপালকে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন পত্রলেখকেরা। চিঠিতে বলা হয়েছে, যাদবপুরের পড়ুয়াদের অরাজনৈতিক আন্দোলন শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের ছাত্রসমাজকে নাড়া দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই রাজ্যপালকে অবিলম্বে তাঁদের দাবি মেটানোর আর্জি জানিয়েছেন সুমিতবাবুরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement