প্রতিবাদী: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ডাক্তারদের মশাল মিছিল। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়ারা মশাল হাতে মানববন্ধনে দাঁড়ালেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আর জি কর-কাণ্ডের নিহত ডাক্তার-ছাত্রী বিচার না-পেলে তাঁরা উৎসবে ফিরবেন না। ঘটনার ৫০ দিন পরেও সুবিচার অধরা।
রবিবার রাত তখন ৯টা। ধর্মতলা চত্বর শুধু মশালময়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএমের জুনিয়র চিকিৎসকেরা মশাল হাতে স্লোগানমুখর। কেউ রাজপথের উপরে লিখছেন, ‘তিলোত্তমা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। মাইকে তখনই পুজোর দিনগুলিতে প্রতিবাদ, রাতদখলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে।
এসএসকেএমের চিকিৎসক-পড়ুয়া দেবলীনা দলুই বললেন, ‘‘গত ৫০ দিনে আমরা কী পেলাম? মানছি, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ। কিন্তু যাঁরা দোষী, তাঁদের সবাইকে গ্রেফতার তো করতে হবে। কোথায় সেই তৎপরতা? যারা তথ্যপ্রমাণ লোপাট করল, তারা পার পেয়ে যাচ্ছে কী ভাবে? অনেক কিছুরই উত্তর পাইনি এখনও। এখনও ওই ঘটনার ধর্ষকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। এই অবস্থায় কি উৎসব করতে পারি?’’
দেবলীনার এই কথার মধ্যেই দেখা গেল, কোনও একটি পুজোর উদ্যোক্তারা ট্রাকে চাপিয়ে দুর্গা প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে যাচ্ছেন। দেবলীনার পাশে দাঁড়িয়ে মশাল হাতে অন্য কয়েক জন চিকিৎসক-পড়ুয়া সেই প্রতিমার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, ‘‘কেউ যেন ভেবে না ফেলেন যে, সামনে উৎসব আসছে বলে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আমাদের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়বে। যে সব পুলিশ আধিকারিকদের সরানোর দাবি করেছিলাম, তাঁদের সরানোর বদলে বদলি করে দেওয়া হল। এ সব উপরচালাকি আমরা ধরে ফেলেছি। আগামী দিনে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়বে।’’
আর এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘শুধুমাত্র টালা থানার প্রাক্তন ওসি নন, আরও যে সব পুলিশকর্তা এবং সরকারের মাথারা অপরাধে জড়িত, তাঁদের কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে?’’ আজ, সোমবার ফের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আর জি করের ঘটনার। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিলেন, সর্বোচ্চ আদালত কী বলে, তা জানার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন।
এরই মধ্যে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ারাও মিছিল করে ধর্মতলা এসে পৌঁছন। ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের কারও হাতে ছিল মশাল, কারও হাতে মোমবাতি। এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়াদের মিশেলে এক বিশাল মানববন্ধন তৈরি হয়। কিছু ক্ষণ স্লোগানের পরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে তাঁদের মানববন্ধন শেষ হয়।