জলা বাঁচাতে এ বার আর্জি মুখ্যমন্ত্রীকে

পূর্ব কলকাতার জলাভূমি পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, শহরের নিকাশির জল প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধিত হয়। সেই জলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জন্মায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৫০
Share:

গত ১৮ মাসে পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে ৮৫টি বেআইনি নির্মাণের ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশ দফতরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার এমনই দাবি করল পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’। শুধু তাই নয়, পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী-পুত্রের নামে বেআইনি ভাবে জমি কেনা হয়েছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেছেন ওই সংগঠনের সদস্যেরা। সংগঠনের আহ্বায়ক নব দত্ত বলেন, ‘‘পরিবেশমন্ত্রী নিজে পরিবেশ বিরোধী কাজ করছেন। তাই তাঁর পদত্যাগ এবং এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। তিনি কোনও ব্যবস্থা না নিলে আদালতে যাব।’’

Advertisement

জলাভূমিতে জমি কেনার অভিযোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে শোভনবাবু বলেন, ‘‘ওই জমিটি জলাভূমির বাইরে থাকা একটি সমবায় আবাসনের। আমার ছেলে তা মামার বাড়ি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। এ নিয়ে একটি মামলায় আদালতে সেই নথিও জমা দেওয়া হয়েছে। এর পরে আর কী বলব!’’

পূর্ব কলকাতার জলাভূমি পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, শহরের নিকাশির জল প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধিত হয়। সেই জলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জন্মায়। ফলে এই জলে মাছ চাষও ভাল হয়। পরিবেশগত দিক থেকে গুরুত্বের কথা বিচার করে এই জলাভূমিকে ‘রামসর’ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, এই জলাভূমিকে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। কী ভাবে তা হচ্ছে, তথ্য জানার অধিকার আইনে পরিবেশ দফতরের কাছে তা জানতে চেয়েছিল সবুজ মঞ্চ। তাতেই ১৮ মাসে ৮৫টি অভিযোগ দায়ের হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে বহু দোতলা, তিনতলা বাড়ি তৈরি হওয়ার কথাও স্বীকার করেছে পরিবেশ দফতর। পরিবেশকর্মী শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমি প্রকৃতির দেওয়া উপহার। তাকে যত্ন না করে উল্টে নষ্ট করা হচ্ছে।’’

বস্তুত, শোভনবাবু পরিবেশমন্ত্রী হওয়ার পরেই উন্নয়নের স্বার্থে জলাভূমির একাংশ ব্যবহার করার কথা বলেছিলেন। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে ইকো পার্ক এবং উড়ালপুল নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। শোভনবাবু জানিয়েছিলেন, পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু নববাবুদের অভিযোগ, ২ জুন পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী এক রকম কথা বললেও ১৮ জুলাই পরিবেশ দফতরের বৈঠকে বেআইনি নির্মাণকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও পরিবেশমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় আইন পাশ করে ওই কমিটি করা হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে এখনও আলোচনায় আমি প্রস্তুত। সেই দরজা যেন বন্ধ করে না দেওয়া হয়।’’

প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ রয়েছে। জলাভূমিতে নির্মাণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তা হলে এত বেআইনি কাজের খতিয়ান পেয়েও সবুজ মঞ্চ সেখানে মামলা করছে না কেন? নববাবুর জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে জল ধরো, জল ভরোর মতো প্রকল্প চালু করেছেন। প্রকাশ্যে জলাশয় বাঁচানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাই তাঁর কাছেই আর্জি জানাব। তিনি কিছু না করলে তখন শেষ দাওয়াই হিসেবে আদালতে যেতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement