জালে জনিও, সোহরাবরা কিন্তু বেপাত্তাই

চার দিনে পাকড়াও তিন। সাম্বিয়া সোহরাব এবং শাহনওয়াজ (শানু) খান ধরা পড়েছিলেন আগেই। রেড রোড দুর্ঘটনার তদন্তে এ বার সাম্বিয়ার আরও এক বন্ধু জনিকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জনি। — নিজস্ব চিত্র

চার দিনে পাকড়াও তিন। সাম্বিয়া সোহরাব এবং শাহনওয়াজ (শানু) খান ধরা পড়েছিলেন আগেই। রেড রোড দুর্ঘটনার তদন্তে এ বার সাম্বিয়ার আরও এক বন্ধু জনিকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করল পুলিশ। যদিও পরিবারের দাবি, জনি আত্মসমর্পণ করেছেন।

Advertisement

সাম্বিয়ার বাবা, তৃণমূল নেতা তথা ডাকসাইটে ফল ব্যবসায়ী মহম্মদ সোহরাব এবং তাঁর বড় ছেলে আম্বিয়ার অবশ্য এখনও খোঁজ নেই। তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন শানু-জনির আত্মীয়রা।

উত্তরে লালবাজারের অফিসারদের একাংশ বলছেন, এই মামলায় আগ বাড়িয়ে সোহরাব-আম্বিয়াকে গ্রেফতার করা হবেই বা কেন? শানু ও জনি যে দুর্ঘটনার আগের রাতে সাম্বিয়ার সঙ্গে ছিলেন, তার কিছু প্রমাণ ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। দুর্ঘটনার ভোরে তাঁরা সাম্বিয়ার গাড়িতে ছিলেন কি না, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তা অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করতে এই তিন জনকে হাতে পাওয়া জরুরি ছিল।

Advertisement

কিন্তু সোহরাব বা তাঁর বড় ছেলে সেই ভোরে রেড রোড চত্বরে বা ওই অডি গাড়িতে ছিলেন বলে তদন্তে কোনও ইঙ্গিত নেই। তা ছাড়া, কেউ আত্মগোপন করে আছেন— সেই যুক্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা যায় না। এক যদি না তাঁর নামে হুলিয়া বের হয়। ভাইয়ের জন্য অডি গাড়িটি কিনেছিলেন আম্বিয়া। ট্রাফিক অফিসারদের বক্তব্য, কোনও গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটালে তার মালিকের ব্যাখ্যা চাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। সেই যুক্তিতে তা-ও আম্বিয়াকে জেরা করা যেতে পারে। কিন্তু রেড রোডের ঘটনায় সোহরাবের কোনও যোগের কথা এখনও জানা যায়নি।

তবে পুলিশকর্তাদের দাবি, তদন্তে যদি দেখা যায়, সাম্বিয়াকে গা ঢাকা দিতে বা প্রমাণ লোপাট করতে সোহরাব বা আম্বিয়া কোনও সাহায্য করেছিলেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার রাস্তা খোলাই রয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সোহরাব-আম্বিয়াকে আমরা কিন্তু ক্লিনচিট দিচ্ছি না। দেখুন না কী হয়।’’

শানু ও জনির পরিবারের যদিও দাবি, ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে ওই দুই যুবককে। শানুর এক আত্মীয়ের অভিযোগ, ‘‘এখন তো বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশই বাবা-ছেলেকে আত্মগোপনের সুযোগ করে দিয়েছে। হইচই কমে গেলে দেখা যাবে, ওঁরা কলকাতা বা আশপাশেই কোথাও ঘাপটি মেরে ছিলেন।’’ পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন সাম্বিয়ার অডির পিছনে একটি স্কোডা গাড়িতে ছিলেন শানু-জনি। সাম্বিয়া পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে অভিমন্যুকে পিষে দেন। সেনাবাহিনী গোড়া থেকেই বলছে, অডিতে সে দিন এক জনই ছিলেন বলে তদন্তে ইঙ্গিত পেয়েছে তারা। কিন্তু পুলিশ বলে আসছে, গাড়িতে একাধিক ব্যক্তির থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সাম্বিয়ার মতো শানু ও জনির বিরুদ্ধেও খুন এবং খুনের চেষ্টা, প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার শানু ও জনিকে আদালতে তোলা হলে সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন দুই পরিবারের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ গ্রেফতারির সময়ে এমন ‘নাটক’ করল, যেন কুখ্যাত কোনও জঙ্গি বা অপরাধীকে বহু চেষ্টায় ধরা হয়েছে। শানুর পরিবারের দাবি, তিনি বাড়িতে ফোন করেছিলেন। সেই খবর বাড়ির লোকেরাই পুলিশকে জানান। না হলে পুলিশের পক্ষে শানুকে ধরা সম্ভব ছিল না। আর জনির দাদা সানির মন্তব্য, ‘‘ভাই নিজে ধরা দিয়েছে। রাঁচি থেকে এ দিন সকালে ফিরে এক বন্ধুকে নিয়ে ও সোজা চলে যায় একবালপুর থানায়। পুলিশের কাছে কোনও খবরই ছিল না।’’

পুলিশ সূত্রের অবশ্য দাবি, সোমবার দুপুরে বাড়িতে ফোন করেছিলেন জনি। ফোনে আড়ি পেতে পুলিশ জানতে পারে, তিনি আছেন রাঁচিতে। জনির এক দাদাকে নিয়ে গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা রাঁচির লোয়ার বাজারের একটি বাড়িতে যান। বাড়িটি জনির এক বন্ধুর। পুলিশের দাবি, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে নাম জড়ানোর পরে এখানেই ক’দিন লুকিয়ে ছিলেন জনি। গত বুধবার রেড রোডের ঘটনার পর সাম্বিয়া ও শানুকে নিয়ে তিনি ফের এই বাড়িতে এসে ওঠেন। সেখান থেকে পরে সাম্বিয়া চলে যান কলকাতায়, শানু যান দিল্লি।

গোয়েন্দাদের দাবি, বাড়িটিতে পৌঁছে তাঁরা জনির ছেড়ে রাখা জুতো-জামা দেখতে পান। কিন্তু জনি ছিলেন না। পুলিশের সন্দেহ, আগাম খবর পেয়েই জনি পালিয়েছিলেন। এর পর মঙ্গলবার সকালে তাঁকে একবালপুর এলাকায় দেখা গিয়েছে বলে খবর পায় পুলিশ। তার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

এ দিন আদালতে জনির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘আমার মক্কেল ঘাতক অডি গাড়িতে ছিলেন না। এমন কোনও প্রমাণও পুলিশের হাতে নেই। জনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর মা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানকে চিঠি লিখে তদন্তে সাহায্যের কথা জানিয়েছিলেন। জনি সাহায্যে প্রস্তুত। তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’’ শানুর আইনজীবী ফজলে আহমেদ খান বলেন, ‘‘সাম্বিয়ার গাড়িতে ছিলেন— শুধু এই সন্দেহে আমার মক্কেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের যে তত্ত্ব পুলিশ খাড়া করছে, তা-ও জোরালো হচ্ছে না। শানু তো ধরা দিয়েছেন!’’

সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, এই দু’জনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তাঁর আর্জির ভিত্তিতে দু’জনকেই ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালত থেকে বেরোনোর সময় জনি বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement