শাহিনবাগের পথে প্রতিবাদ এ শহরেও

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫১
Share:

সরব: দিল্লির ধাঁচে কলকাতাতেও শুরু হল নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মহিলাদের অবস্থান। মঙ্গলবার, পার্ক সার্কাস ময়দানে। ছবি: সুমন বল্লভ

দিল্লির সীমানা পেরিয়ে শাহিনবাগ এ বার কলকাতাতেও!

Advertisement

দেশের এই দুর্দিনে ঘরে বসে আর থাকতে চান না ওঁরা। তাই বাড়ির কাজ সেরে, শিশুসন্তানকে কোলে নিয়েই চলে এসেছিলেন সকলে। পিছিয়ে ছিলেন না পুরুষরাও। আর তাঁদের ভরসা জোগাতে পাশে ছিলেন প্রবীণ-প্রবীণারা। এগিয়ে এলেন কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। সেই সঙ্গে বহু সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার এ ভাবেই পার্ক সার্কাস ও মধ্য কলকাতার কিছু মহিলার উদ্যোগে পার্ক সার্কাস ময়দানে তৈরি হল ‘কলকাতার শাহিনবাগ’। আওয়াজ উঠল আজাদির। মোদী সরকারের আগ্রাসী নীতির হাত থেকে আজাদি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে আজাদি। জমায়েতকে আজাদির সেই স্লোগান শেখালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া রূপকথা ও প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া আরিয়ান।

গত কয়েক দিন ধরেই মোদী সরকারের নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পথে নামতে চাইছিলেন পার্ক সার্কাসের মহিলারা। কিন্তু তাঁদের মনে হয়েছিল, এ রকম বিক্ষিপ্ত ভাবে মিছিল করে লাভ নেই। তা ছাড়া, বাড়ি বা অফিসের কাজ সামলে প্রতিদিন মিছিলে পা মেলানোও সম্ভব নয়। বরং দিল্লির শাহিনবাগের মতো এখানেও একটি শাহিনবাগ তৈরি হলে নিজেদের সুবিধামতো সময়ে এসে বসতে পারবেন মহিলারা। মোদী সরকার এই আইন প্রত্যাহার না করলে অনির্দিষ্টকাল ধরে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। তাঁদের সেই প্রতিবাদে পাশে পেতে আন্দোলনকারীরাই যোগাযোগ করেছিলেন কলকাতা, প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুরের পড়ুয়াদের সঙ্গে।

Advertisement

মাত্র কয়েক দিনের আলোচনার পরেই ঠিক হয়, মঙ্গলবার দুপুর থেকে আন্দোলন শুরু করবে এ শহরের শাহিনবাগ। সেই মতো এ দিন দুপুরে বিভিন্ন বয়সের জনা পঞ্চাশ মহিলা নিজেদের কাজকর্ম সেরে চলে আসেন পার্ক সার্কাস ময়দানে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় কিছু মানুষও। তবে এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ এসে জমায়েতকারীদের জানায়, সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন।

এ কথা শুনে অবশ্য পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াননি আন্দোলনকারীরা। বরং পুলিশকে তাঁরা শান্ত ভাবে বলেন, ‘‘আমরা এসেছি সংবিধান বাঁচাতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার কথা ভেবে। এ ভাবে তাড়াবেন না। চাইলে আমাদের গ্রেফতার করুন।’’ পুলিশ আর বাধা দেয়নি। কারণ তত ক্ষণে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন আশি পেরোনো নুরজাহান শাকিল বা পঞ্চাশের ফারহা ইসলামেরা। নুরজাহান বললেন, ‘‘দেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে, সেখানে বয়স কি কোনও বাধা হতে পারে? সরকার যখন জুলুম শুরু করে, তখন তো সাধারণ মানুষকে পথে নামতেই হবে। আমরা এ দেশের মানুষ। দেশের সংবিধান মেনে চলি। এখন এসেছি সেই সংবিধানের জন্য।’’

এ দিন সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাস ময়দানে বসে অশীতিপর বৃদ্ধার এই কণ্ঠস্বর মনে করিয়ে দিচ্ছে দিল্লির শাহিনবাগের মায়েদের কথা। কনকনে ঠান্ডাতেও যাঁরা শিশু কোলে বসে রয়েছেন গত কয়েক দিন ধরে। নুরজাহানের সঙ্গে ছিলেন সত্তরের এক প্রবীণা। নিজেকে মিসেস আজিজ বলে পরিচয় দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক দিন চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু জামিয়া মিলিয়া ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপরে যে ভাবে হামলা হল, তার পরে আর চুপ থাকা সম্ভব নয়। এর পরে তো আমার, আপনার উপরেও এ ভাবে হামলা হবে!’’

যাঁর ডাকে নুরজাহান, মিসেস আজিজ বা ফারহা ছাড়াও একাধিক মহিলা দুপুরের পর থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন পার্ক সার্কাস ময়দানে, সেই আসমাত জামিলের সম্প্রতি কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু কষ্ট ভুলে এ দিন তিনিই মহিলাদের জমায়েতের ডাক দিয়েছেন। আসমাত বললেন, ‘‘শুধু দিল্লি থেকে গর্জে উঠলে হবে না। গোটা দেশকে জাগতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে। না-হলে এই ধর্মীয় বিভেদের মাধ্যমে নাগরিকদের চিহ্নিত করা আটকানো যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement