নিজস্ব চিত্র
বসন্ত এসে গিয়েছে। বাতাসে শিমুল-পলাশের গন্ধ। গত দু’বছর এক ক্ষুদ্র ভাইরাস ম্লান করে রেখেছিল জনজীবন। অতিমারি পরিস্থিতি কাটিয়ে আবারও ছন্দে ফিরছে জীবন, রং ফিরছে জীবনে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখতে বাজার ছেয়ে গিয়েছে ভেষজ আবিরে। এই ভেষজ আবিরের সঙ্গে সকলের পরিচয় প্রায় ১৮ বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তারপর থেকে ফি-বছর সেখানে মেলে বিভিন্ন ফুলের নির্যাস দিয়ে তৈরি আবির। এই আবির যাঁর মস্তিস্কপ্রসূত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন কর্মচারী অসীম চট্টোপাধ্যায়। কর্মজীবন ফুরিয়েছে বছর আষ্টেক। তবে নিত্য নতুন আবিষ্কারের নেশা তাঁকে ছাড়েনি। এখন নিজের বাড়িতেই ল্যাবরেটরি। প্রতিবছর সেখানেই দোলের আগে ভেষজ আবির তৈরি করেন তিনি। যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘পুষ্পা’।
পুষ্পা যে কেবল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই জনপ্রিয় তা-ই নয়, পৌঁছে যায় দেশ-বিদেশেও। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে নিজে হাতে আবির তৈরি করা দেখাতে দেখাতে বলেন, ‘‘শুরু করেছিলাম ২০০৪ সাল নাগাদ। প্রথমবার ২০ কেজি তৈরি করেছিলাম। ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই থেকেই শুরু। পদ্ধতি নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচিয়ে রেখে কৃষকদের সহায়তা করাই ছিল প্রাথমিক উদেশ্য।’’
নিজের বাড়ির একতলায় কর্মজীবন ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও কর্ম ব্যস্ততায় কাটে অসীমবাবুর জীবন। দোলের আগে দম ফেলার ফুরসত নেই। সঙ্গী সহকারী রতন। সারাবছর রিকশা চালিয়ে যাঁর জীবন যাপন, বছরের এই কয়েকটা দিন হয়ে ওঠেন অসীমবাবুর একনিষ্ঠ সহায়ক। গোলাপ, পলাশ, অপরাজিতা, গাঁদা ফুলের নির্যাস দিয়ে আবির তৈরি হয়। তার মধ্যে মেশানো হয় জীবাণুনাশক নিমপাতা।
দোল খেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা নিরাপদ সেই কথা বলতে গিয়ে চিকিৎসকরা বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন ভেষজ আবির ব্যবহারের, তখন সত্তরোর্ধ্ব অসীমবাবুর দাবি, তাঁর আবিরের রং দেখেই বোঝা যায় তাতে কোনও ক্ষতিকারক পদার্থ মেশানো নেই। ‘পুরোটাই ন্যাচারাল।’