পুর কমিশনার কি মেয়রের বিকল্প?
মেয়রের স্বাক্ষর ছিল না। পুর কমিশনারের স্বাক্ষর-সহ অনুমতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকে। বিষয় পরিবেশ সুরক্ষা আইনের একটি নিয়ম তৈরি করা। বিধি যাতে এমন হয়— শহরে যাঁরা বেশি জঞ্জাল জমান, তা অপসারণের দায়ও নিতে হবে তাঁদেরই। কিন্তু পুর সূত্রে খবর, সেই কাজ হোঁচট খেল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে!
প্রস্তাব উঠতেই মেয়র জানতে চান, কার নির্দেশে সেটি বৈঠকে পেশ হয়েছে? বলা হয়, পুর কমিশনারকে জানিয়েই তা তোলা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, এর পরেই মেয়র বলে ওঠেন— ‘ইজ় কমিশনার সাবস্টিটিউট অব মেয়র?’
পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়রের ওই ‘মন্তব্যে’ হতবাক মেয়র পরিষদের সদস্য-সহ অফিসারেরাও। ইতিমধ্যে পুর কমিশনার খলিল আহমেদও তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিবের নির্দেশ অনুসারে ওই উপধারা বানানো হয়েছে। কিন্তু মেয়র প্রশ্ন তোলায় তা আর অনুমোদিত হয়নি।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতায় দৈনিক সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য জমে। এর ৩০-৪০ শতাংশ জমা হয় কিছু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে। পরিবেশ সুরক্ষার আইনে বলা হয়েছে, ১০০ কেজি বা তার বেশি জঞ্জাল জমে যাদের, তাদের নিজেদের খরচেই ফেলতে হবে। পুরকতৃর্পক্ষ তা ফেলার ব্যবস্থাও করলেও খরচ দিতে হবে সংস্থাকেই। না হলে জরিমানা হবে। তবে কত পরিমাণ জঞ্জালের জন্য কত খরচ, জরিমানাই বা কত এবং আরও খুঁটিনাটি বিষয়ে মূল আইন মেনে একটা নিয়মের তালিকা (বাই ল’জ়) তৈরি করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে এক পুর আধিকারিক জানান, ২০১৬ সালেই সেই উপধারা তৈরির নির্দেশ আসে রাজ্যে। জঞ্জাল অপসারণে কেন্দ্রীয় সহায়তাও পায় রাজ্য সরকারগুলি। সম্প্রতি রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব সেই নিয়মবিধি তৈরির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন পুর প্রশাসনকে। পুর কমিশনার-সহ জঞ্জাল অপসারণ দফতর এবং পুরসভার আইন দফতর ওই নিয়মবিধি খুঁটিয়ে দেখে মেয়র পরিষদ বৈঠকে পেশ করায় সহমত হন। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘সে দিন মেয়রকে পাওয়া যায়নি। তাই বৈঠকের আগে পুর কমিশনারের স্বাক্ষর নিয়েই সেটি পেশ করা হয়েছিল।’’
এ দিকে, মেয়রের ওই মন্তব্যের কথা জানাজানি হতে ক্ষোভ বাড়ছে অফিসার মহলেও। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, পুর কমিশনার পুর প্রশাসনের কর্তা। এমনকি, মেয়র থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা কারণে তাঁকে সরাসরি ফোন করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পুর কমিশনারের নির্দেশেই অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারেরা কাজ করেন। তাঁরা জানান, এখানে যে নিয়মবিধি তৈরি হয়েছে, তা পুরসভাকে করতে হতই। মেয়র পরিষদ বৈঠকে অনুমোদনও নিতে হবে। এই কাজ না এগোলে পুর প্রশাসনেরই ক্ষতি। পুরকর্তাদের ধারণা, মেয়রের ওই মন্তব্যে ‘হোঁচট’ খেল সেই উদ্যোগ।
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে নারাজ পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। বারবার ফোন করা হলেও ধরেননি মেয়র শোভনবাবু। মেলেনি এসএমএসের উত্তরও।