কুকুর নিধনের রিপোর্ট পেশের পরেই হুমকির মুখে তদন্তকারী

গ্রেফতার হন দু’জন। কুকুরছানা খুনের ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে মোট পাঁচ জন পড়ুয়ার নাম। ওই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত ছিলেন এবং নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশের মদতেই ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫০
Share:

মুক্ত: আলিপুর মহিলা জেল থেকে বেরোচ্ছেন দুই অভিযুক্ত মৌটুসি মণ্ডল এবং সোমা বর্মণ। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

গ্রেফতার হন দু’জন। কুকুরছানা খুনের ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে মোট পাঁচ জন পড়ুয়ার নাম। ওই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত ছিলেন এবং নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশের মদতেই ঘটনাটি ঘটেছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কুকুরছানা খুনের ঘটনায় স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ কথাই জানানো হয়েছে। অভিযোগ উঠছে, স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট পাঠানোর পরেই তদন্ত কমিটির প্রধানকে হুমকি দিচ্ছেন নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশ।

Advertisement

এনআরএসের ভিতরে রবিবার ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ পাওয়া যায়। কী ভাবে তাদের মৃত্যু হল, তা খতিয়ে দেখার জন্য হাসপাতালের তরফে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গড়া হয়। তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস। হাসপাতালের তরফে বৃহস্পতিবার বিকেলে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী, যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্ত্রী (নার্সিং) মাধবী দাস এবং নার্সিং কাউন্সিলের কাছে।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টে কোনও ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল বা প্রশিক্ষণ বন্ধ করার বিষয়ে কোনও পরামর্শ বা সুপারিশ নেই। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী, সিস্টার নার্সদের সঙ্গে কথা বলে যে-সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, শুধু সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে নার্সিং কাউন্সিল। হাসপাতাল-কর্তারা জানান, নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশ হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের পড়াশোনার ক্ষতি হলে কিংবা কর্মজীবনে কোনও সমস্যা হলে এনআরএস-কর্তৃপক্ষকে তার দায় নিতে হবে। দ্বৈপায়নবাবু ফেসবুকে লিখেছেন, তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে যে-ভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা অস্বাস্থ্যকর। যদিও এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দ্বৈপায়নবাবু বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছি। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

বুধবার আদালত জামিন দিলেও আইনি জটিলতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ধৃত দুই নার্সিং পড়ুয়া সোমা বর্মণ ও মৌটুসি মণ্ডলকে আলিপুর মহিলা জেলেই থাকতে হয়। তাঁদের আবেদনক্রমে আদালত জামিনের কিছু শর্ত শিথিল করায় সন্ধ্যায় আইনি জটিলতা মিটে যায়। তার পরেই জেল থেকে ছাড়া পান সোমা ও মৌটুসি। সেখান থেকে বেরোনোর সময় দু’জনেই বলেন, ‘‘আমরা নির্দোষ। আমরা কুকুরছানা মারিনি।’’ এই উক্তির প্রতিধ্বনি শোনা গেল সোমার বোন সুস্মিতা বর্মণের বক্তব্যেও। কাকদ্বীপের ওই তরুণী বলেন, ‘‘দিদিকে যে-ভিডিয়ো ফুটেজের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। আমরা অন্তত ওই ফুটেজ দেখে দিদিকে চিনতে পারিনি।’’ পরিবারের সদস্যেরা সোমা ও মৌটুসিকে বাড়ি নিয়ে যান।

ওই দু’জন ছাড়াও কুকুরছানা খুনের ঘটনায় আরও তিন জন নার্সিং পড়ুয়ার নাম প্রকাশ্যে এসেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন তাঁরা ক্লাস করেছেন। আন্দোলনরত পড়ুয়ারাও ক্লাসে যোগ দিয়েছেন।

এনআরএস-কর্তৃপক্ষ জানান, ৩৫ জন ছাত্রীকে কুকুরে কামড়ানোর অভিযোগ উঠলেও সেটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছয়নি। তাই কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেননি। পূর্ত দফতরের কর্মীরা কুকুরের প্রবেশ রুখতে নার্সিং হস্টেলের দরজা ও জানলায় বিশেষ জাল লাগানোর কাজ শুরু করার আগে এ দিন হস্টেল ঘুরে দেখেন। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে কুকুরের ঘোরাফেরায় রাশ টানতে নির্বীজকরণের পরিকল্পনা করেছেন। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে

যোগাযোগ করা হয়েছে। হাসপাতালের একটি ঘরেই কুকুরের নির্বীজকরণ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement