প্রতীকী ছবি।
এক দিন কেটে গেলেও উল্টোডাঙার ডালকলে খুনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হল না। পুলিশ অবশ্য বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মৃত যুবকের এক সঙ্গীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনিকেও চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে তাদের দাবি। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করতে পারলে খুনের কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের
অনুমান, ডালকলে মদ্যপানের আসরে তাৎক্ষণিক কোনও বিবাদের জেরে খুন হয়ে থাকতে পারেন রাকেশ সাউ নামে বছর তিরিশের ওই যুবক।
উল্টোডাঙার গোরাপদ সরকার লেনের একটি ডালকলে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে বলে মঙ্গলবার সকালে লালবাজারে খবর গিয়েছিল। ডালকলের মালিক পরশ সাউ নিজেই সেখানে ফোন করে বিষয়টি জানান। তাঁর দাবি, রাকেশ বছরখানেক ধরে তাঁর কাছে কাজ করছিলেন। ডালকলে যখন কাজ থাকত না, তিনি তখন অন্যত্র কাজ করতেন। তবে প্রতি রাতে কাজ থেকে ফিরে ডালকলেই ঘুমোতেন ওই যুবক।
সেই মতো মঙ্গলবার রাতেও তাঁর বাড়ি গিয়ে ডালকলের চাবি রাকেশ নিয়ে এসেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন পরশ। এর পরে বুধবার ভোরে মন্দিরে যাওয়ার আগে পরশ কারখানায় এসে দেখেন, গেটে বাইরে থেকে তালা ঝুলছে। বাড়ি থেকে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে এসে ডালকল খুলে তিনি দেখেন, মেঝেয় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাকেশের দেহ। গলার কাছে এবং মাথায় গভীর ক্ষত। পরশের দাবি, তিনিই ছুটে বেরিয়ে পাড়ার লোককে ঘটনাটি জানান।
বুধবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে পরশের এই বক্তব্যই পুলিশ পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর পরে রাত আড়াইটে নাগাদ তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এবং স্থানীয় সূত্রে খবর নিয়ে রাকেশের ‘বন্ধু’ এক যুবককে আটক করে পুলিশ। তাঁকেও রাত পর্যন্ত থানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দিনভর লালবাজারের হোমিসাইড শাখার পাশাপাশি বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ডালকলে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ কুকুর। তবে সে-ও গন্ধ শুঁকে কিছুটা দূর যাওয়ার পরে দাসপাড়ার একটি শৌচাগারের কাছে থেমে যায় বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক হওয়া যুবক দাবি করেছেন, শ্রমিক হিসেবে কাজের সূত্রে রাকেশের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।
প্রায়ই রাতে ওই ডালকলে রাকেশের সঙ্গে মদ্যপান করতেন তিনি। চলত গাঁজার আসরও। তিনি ছাড়াও সেখানে আরও দু’-এক জন আসতেন। তাঁরাও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিকের কাজ করেন। যদিও মঙ্গলবার রাতে রাকেশের সঙ্গে তিনি ছিলেন না বলে বার বার দাবি করেছেন ওই যুবক। তবে তিনি জেরায় রাকেশের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে এক জনের নাম বলেছেন তদন্তকারীদের। ওই ব্যক্তির অবশ্য এখনও খোঁজ মেলেনি। তাঁর সন্ধানে বৃহস্পতিবার ভোরে দাসপাড়ার যে জায়গায় শ্রমিক ভাড়া পাওয়া যায়, সেখানেও গিয়েছিল পুলিশ।
লালবাজারের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এঁদের বেশির ভাগই ফুটপাতে থাকেন। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ডালকলে কাজ করেন। নেশা করার সূত্রেই এক জনের সঙ্গে অন্য জনের সম্পর্ক। মঙ্গলবার রাতে ওই নেশার আসরেই কিছু ঘটেছে বলে আমাদের সন্দেহ। যাঁর খোঁজ চলছে, তাঁর কোনও ফোন নম্বর নেই। কোনও নির্দিষ্ট ফুটপাতেও থাকেন না। তবে খুনের উদ্দেশ্য কী, খুনিকে ধরতে না-পারা পর্যন্ত তা পরিষ্কার হবে না।’’
ফলে আপাতত ওই ব্যক্তি কোথায় চম্পট দিয়েছেন, সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টাতেই ব্যস্ত গোয়েন্দারা।