Police Investigations

মণীশ খুনের জট কাটাতে ভরসা রওশন, মত তদন্তকারীদের

বছরখানেক পরে বিহারের একটি অপরাধে রওশনের যোগ মেলায় সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকে বেউর জেলে সুবোধের পাশের সেলেই ঠাঁই হয় রওশনের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ ও বিতান ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:০৪
Share:

মণীশ শুক্ল। —ফাইল চিত্র।

ফর্সা, ছিপছিপে চেহারা। পরনে দামি ব্র্যান্ডের গাঢ় নীল রঙের শার্ট, জিন্‌স, পায়ে সাদা স্নিকার্স। ‘নায়ক সুলভ’ ভঙ্গিমায় ব্যারাকপুর আদালতে ঢোকার সময়েও চোখেমুখে চিন্তার ছাপ নেই। বিহারের দুষ্কৃতী সুবোধ সিংহের সাম্রাজ্যের এ হেন ‘মেজো কর্তা’ তথা দুষ্কৃতী রওশন যাদব ওরফে তাঁতিয়াকে বৃহস্পতিবার দেখে তাজ্জব পুলিশকর্মীরাও!

Advertisement

সন্দেশখালির ঘটনার পরে শেখ শাহজাহানকে যখন আদালতে তোলা হয়েছিল, তখনও ওই অভিযুক্তকে দেখা গিয়েছিল বীরদর্পে। সম্প্রতি বিহার থেকে সুবোধকে এনে আসানসোল আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়েও ওই দুষ্কৃতীর মধ্যে অপরাধীসুলভ লক্ষণ চোখে পড়েনি। সেই পথেই হেঁটেছে রওশন। দুষ্কৃতী হিসাবে সুবোধের তুলনায় ‘আনকোরা’ হয়েও ব্যারাকপুর আদালতে ঢোকার সময়ে বছর বাইশের তরুণ ছিল স্বাভাবিক।

টিটাগড়ের ব্যবসায়ী তাপস ভগতকে বিহারের বেউর জেলে বসেই ফোনে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত রওশনকে রাজ্যে নিয়ে এসেছে ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ। সুবোধের নির্দেশেই সে ফোন করেছিল কিনা, তা দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। বিহারের বৈশালীর বাসিন্দা রওশনের অপরাধ জগতে প্রবেশ কিশোর বয়সেই। এফআইআরে নাম না থাকলেও ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ‘স্ট্রংম্যান’ হিসাবে পরিচিত মণীশ শুক্লকে খুনের ঘটনাতেও পরবর্তী সময়ে নাম জড়িয়েছিল রওশনের। মণীশকে খুনে যে ছ’জন শার্প-শুটারকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যেই ছিল রওশন। সেই সময়ে কিশোর ওই দুষ্কৃতীই কার্বাইন চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দেয় মণীশকে। সিআইডি ও পুলিশের তৎকালীন তদন্তকারীদের মতে, মণীশকে খুন করাই ছিল রওশনের প্রথম কাজ। সফল হওয়ায় খুব সহজেই সুবোধের ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’-এর ‘সেকেন্ড ম্যান’ হয়ে ওঠে রওশন। মণীশকে খুনের পরে রাজ্য ছেড়ে চলে যায় ওই দুষ্কৃতী।

Advertisement

বছরখানেক পরে বিহারের একটি অপরাধে রওশনের যোগ মেলায় সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকে বেউর জেলে সুবোধের পাশের সেলেই ঠাঁই হয় রওশনের। শুক্রবার মণীশের বাবা চন্দ্রমণি শুক্ল বলেন, ‘‘সিআইডি-র চার্জশিটে রওশনের নাম রয়েছে। কিন্তু ওকে নিয়েও আসা হয়নি, কখনও জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।’’

সূত্রের খবর, মণীশকে খুনের পরে বাইক ও আগ্নেয়াস্ত্র কোথায়, কী ভাবে ফেলতে হবে এবং কোন পথ দিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে, তার ‘ব্লু-প্রিন্ট’ রওশনদের কে বা কারা ছকে দিয়েছিল, সেটাও তার থেকে জানার চেষ্টা করতে পারে পুলিশ। সিআইডি-ও পুনরায় মণীশ হত্যা মামলার তদন্তে রওশনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে। সূত্রের খবর, অস্ত্র এবং বাইক ঝোপ-জঙ্গলে ফেলে দেওয়া ও এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রওশনের সঙ্গে স্থানীয় এক ‘প্রভাবশালী’র কথা হয়েছিল। তবে তারও আগে ওই ‘প্রভাবশালী’র সঙ্গে সুবোধের কথা হয়েছিল বলেও পুলিশ সূত্রের খবর। সেই সব অডিয়ো ক্লিপ পুলিশ ও সিআইডি-র হাতে রয়েছে। যা মণীশ হত্যা মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে বলেও তদন্তকারীদের মত।

আবার রওশনের মতো বাকি শার্প-শুটারদের সুবোধ ঠিক কী বলে এবং কত টাকার বিনিময়ে পাঠিয়েছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এই সমস্ত সূত্র এক জায়গায় করে মণীশ হত্যা মামলায় নতুন দিক উন্মোচন করার সম্ভাবনা দেখছেন তদন্তকারীদের একাংশ। চন্দ্রমণি বলেন, ‘‘বিধায়কের বাড়ির অদূরের ঝোপ কী ভাবে বিহারের বাসিন্দা রওশন চিনেছিল, তা প্রকাশ্যে আসা প্রয়োজন। নগরপালকে চিঠি দিয়েছি।’’

মণীশ-মামলার তদন্তে ‘তুরুপের তাস’ রওশন। কিন্তু, রওশনকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষবে না তো ঠান্ডা মাথার সুবোধ বা কোনও প্রভাবশালী? প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement