প্রতীকী ছবি।
কেউ পেল কার্যত গোল্লা! কেউ আবার লেটার নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ! আচমকা উপস্থিত হওয়া স্বাস্থ্য দফতরের কোভিড পরিদর্শক দলের সামনে পড়ে খামতি ঢাকতে অন্য রকম পদ্ধতি অবলম্বনেরও অভিযোগ উঠল। ‘কোভিড প্রোটোকল’ মেনে চিকিৎসা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন নার্সিংহোমেও পৌঁছে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের ‘প্রোটোকল ম্যানেজমেন্ট’ দল। সম্প্রতি শ্যামবাজারের একটি নার্সিংহোমে করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামোর হাল দেখে স্বাস্থ্য ভবনের পরিদর্শক দলের সদস্যেরা ‘বিস্মিত’ হয়েছেন বলে খবর।
গত মঙ্গলবার শ্যামবাজারের ওই নার্সিংহোমের পাশাপাশি ফুলবাগানের একটি নার্সিংহোমেও পরিদর্শনে গিয়েছিলেন চিকিৎসক মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়, সুরেশ রামাসুব্বান এবং আশফাক আহমেদ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শ্যামবাজারের নার্সিংহোমে পরিদর্শন চলাকালীন সেখানকার কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। উল্টে এক জন কর্মীকে আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার) সাজিয়ে পরিদর্শক দলের সামনে হাজির করানোর অভিযোগ উঠেছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য পত্রপাঠ সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তবে শ্যামবাজারের ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে কোভিড চিকিৎসার প্রতি পদে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা লঙ্ঘনের বিবরণ রয়েছে বলে খবর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পরিষেবার যে সকল মাপকাঠিতে ওই নার্সিংহোমের নামের তলায় লাল কালির দাগ পড়েছে তা হল, কোভিড রোগীদের জন্য পৃথক কোনও লিফট নেই। অন্য রোগে আক্রান্ত এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও একই লিফট ব্যবহার করছেন। সেখানে সরকারি নির্দেশিকা মেনে কোভিড আক্রান্তদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। পিপিই-র ব্যবহার এবং তা খোলা-পরার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রন ভেন্টিলেশন প্রয়োগ, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনে অক্সিজেন প্রেসক্রিপশনের ব্যবহার বা রোগীর ‘টপ শিট’ও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না।
উল্টো দিকে, কার্যত লেটার নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ ফুলবাগানের একটি নার্সিংহোম। একই দিনে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিল চিকিৎসকদের ওই দলটি। ২৫ শয্যার ওই নার্সিংহোমে সে দিন মৃদু, মাঝারি উপসর্গযুক্ত এবং গুরুতর অসুস্থ মিলিয়ে মোট ১৯ জন রোগী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। শ্যামবাজারের নার্সিংহোম যে সকল মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তার সব ক’টিতেই ওই নার্সিংহোমের পরিষেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিদর্শক দল। কোভিড চিকিৎসায় পৃথক চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিযুক্ত করার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশিকা মেনেই ফুলবাগানের কোভিড চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিদর্শক দল।
পরিদর্শক দলের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে শ্যামবাজারের ওই নার্সিংহোমের মেডিক্যাল সুপার, চিকিৎসক পার্থপ্রতিম ঘোষ দাবি করেন, কোনও কর্মীকে চিকিৎসক সাজিয়ে হাজির করানো হয়নি। যাঁর সঙ্গে পরিদর্শক দলের সাক্ষাৎ হয়েছিল, তিনি আরএমও-ই। বোঝাপড়ার অভাবে ভুল বার্তা গিয়েছে বলে দাবি তাঁর। মেডিক্যাল সুপারের বক্তব্য, পরিদর্শনের সময়ে চিকিৎসকেরা ওয়ার্ডে রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকায় তাঁদের সঙ্গে পরিদর্শক দলের দেখা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘জায়গার অভাবে পরিকাঠামোগত ত্রুটি কিছু থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার কোভিড চিকিৎসার যে প্রোটোকল তৈরি করেছে, তা মেনেই রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। পরিদর্শক দলের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে উন্নতির সুযোগ সব সময়েই থাকে। পরিদর্শক দল যা পরামর্শ দিয়েছে, তা মেনে চলার চেষ্টা করব।’’