যোগাযোগ: নন্দনে জুনিয়র চিকিৎসকদের ফ্ল্যাশ মব। নিজস্ব চিত্র
‘সাড়ে আটশো! কী করে দেখলাম
কে জানে?’ বহির্বিভাগে পরিষেবা
দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই হতবাক সরকারি হাসপাতালে স্নায়ুরোগের চিকিৎসক। জুনিয়রের কাঁধে ভরসার হাত রেখে সিনিয়রের উক্তি, ‘তা-ও তো টেনে দিলাম বলে এত তাড়াতাড়ি শেষ হল’।
মঙ্গলবার বিকেলে এই কথোপকথনের ঘটনাস্থল এসএসকেএমের স্নায়ুরোগ বহির্বিভাগের তিন নম্বর ঘর। অল্প তারতম্যে যা আকছার শোনা যায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে! এই পরিস্থিতিতে শত চাপেও চিকিৎসকদের হাসি যাতে ম্লান না হয়, সে জন্য চাপ মুক্তির (স্ট্রেস রিলিফ) উপায় খুঁজছে স্বাস্থ্য ভবন।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা অনেক বেশি মানসিক চাপে কাজ করেন। চাপ বেশি হলে তার প্রভাব যে কর্মদক্ষতায় পড়ে, তা প্রমাণিত। চিকিৎসকদের চাপ মুক্তির কাজে রামকৃষ্ণ মিশনকে যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের কথাবার্তায় সাড়াও দিয়েছেন মিশন কর্তৃপক্ষ।’’
কয়েক বছর আগে চাপ মুক্তির পথ্য হিসেবে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাইকোয়েন্ডোর প্রশিক্ষণ চালু হয়েছিল। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) সিলেবাস বদলের হাত ধরে এ বছর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারির ছাত্রদের প্রথম বর্ষের ‘ফাউন্ডেশন কোর্স’-ও ছিল তাইকোয়েন্ডো এবং যোগাভ্যাস। তাতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে স্বাস্থ্য ভবনের এই পরিকল্পনা। সেখানকার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেউ এটা যোগাভ্যাসের মাধ্যমেও নিতে পারেন। আসল কথা হল, শরীর এবং মন তাজা রাখা।’’
সরকারি হাসপাতালে ‘তাজা’ চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশ বলেন, ‘‘অনেক সময়ে রোগীদের মনে হয়, ডাক্তারবাবুরা সংবেদনশীল নন। তাঁরা তাঁদের ঠিক মতো যত্ন নিচ্ছেন না। কিন্তু একটানা রোগী দেখতে গিয়ে ডাক্তারবাবুও ক্লান্ত হতে পারেন।’’ সম্প্রতি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন একটি হোটেলে তিন দিন ধরে চিকিৎসকদের সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ‘আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান, ইন্ডিয়া চ্যাপ্টার’। সেই সম্মেলনে হাজির হয়ে চিকিৎসকদের সংগঠনের গভর্নর বি এ মুরুগানাথন বলেন, ‘‘কাজের চাপে ডাক্তার যদি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হন, কখনওই তিনি সেরাটা দিতে পারবেন না।’’
এই সেরার খোঁজেই হাসপাতালের গণ্ডি ছাড়িয়ে নন্দন চত্বরে ফ্ল্যাশ
মবের আয়োজন করেছিলেন এসএসকেএমের জুনিয়র ডাক্তারেরা। থিম ছিল, ডিপ্রেশন অর্থাৎ অবসাদ। থিমের ব্যাখ্যায় ইন্টার্ন স্বর্ণদীপ মাইতি বলেন, ‘‘বাইরে থেকে দেখে রোগী ও তাঁর পরিজনেরা মনে করেন, আমরা খুব ভাল আছি। কিন্তু তাঁদের মতো আমাদের জীবনেও সমস্যা রয়েছে। পড়াশোনার চাপ, শিক্ষকদের ধমক, পরীক্ষা ভাল না-হওয়া, বাড়ির প্রত্যাশা, রোগীদের প্রত্যাশা— সব কিছু নিয়ে চলতে হয়। সে সব অতিক্রম করে এক জন চিকিৎসক পরিষেবা দেন। এ ধরনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও তৈরি হয়।’’
সাধে কী আর যোগের অঙ্কে চাপ-বিয়োগের পথ খুঁজছে স্বাস্থ্য ভবন!