বেহাল: এমনই দশা দমদমের হরিমোহন দত্ত রোডের পাশে খোলা নর্দমার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
কমছে ফাঁকা জমি। কলকাতা সংলগ্ন পুর এলাকায় মাথা তুলছে বহুতল। তবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত হয়নি জন পরিষেবার পরিকাঠামো। এমনই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে দমদম পুর এলাকার আনাচেকানাচে।
দোরগোড়ায় পুর নির্বাচনের দামামা বাজতেই ফের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা হাজির পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে। বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা বলে, ভোট শেষে সব ভুলে যাওয়ার পালা আসে নিয়ম করে। এ দিকে বাড়তে থাকে দুর্বল পরিকাঠামোর উপরে জনসংখ্যার চাপ। ফলে অবহেলায় দুর্বল ‘শরীর’ ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।
এই পুর এলাকার তেমনই একটি দুর্বল ও সাবেক পরিকাঠামো— নিকাশি ব্যবস্থা। সংস্কারের অভাবে বেহাল দশা নিকাশির মেরুদণ্ড, খালের। যে সব নিকাশি নালার মাধ্যমে জল খালে পৌঁছচ্ছে, তাদের অবস্থাও দুর্বিষহ। যার ফলে পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অংশে জমা জলের সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এই অভিযোগের সত্যতা দেখা গিয়েছিল গত বর্ষাতেও। এলাকার উঁচু-নিচু প্রাকৃতিক গঠনকেও এই বানভাসির অন্য কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। যেমন, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের অবস্থান উঁচুতে। এর সংলগ্ন দমদম পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড আবার তুলনায় নিচু। ওই সব নিচু এলাকায় পরিকাঠামোর পর্যাপ্ত সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকার এক বাসিন্দা অনিতা পোদ্দারের অভিযোগ, বহুতল বাড়ছে। অথচ এখনও খোলা নর্দমা রয়ে গেল। ফলে মশার উপদ্রবও বেড়েছে। রাস্তাঘাট, আলোর কাজ হলেও নিকাশি নালার আধুনিকীকরণ বা সংস্কার হয়নি। বিরোধীদের দাবি, এলাকার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কাজের রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি বিদায়ী পুর বোর্ড। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সেটাই জরুরি ছিল।
অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেতা তথা দমদম পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বরুণ নট্ট জানান, এলাকার নিকাশির জল মূলত দমদম ক্যান্টনমেন্ট বা বাগজোলা খালে গিয়ে পড়ে। গত বছরের টানা ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টিতে খাল ভরে যাওয়ায় জমা জলের সমস্যা পুর এলাকার কিছু অংশে দেখা গিয়েছিল। তিনি জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই দমদম, দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম, বিধাননগর পুরসভার জমা জলের সমস্যা দূর করতে খাল সংস্কারের পরিকল্পনার কথা বলেছে রাজ্য সরকার।
পুরসভা সূত্রের খবর, পরিকল্পনামাফিক নিকাশির উন্নয়নে কিছু কাজ শুরু হয়েছে। জেসপ সংলগ্ন এলাকা থেকে নিউ কোয়ার্টার্স বরাবর দমদম ক্যান্টনমেন্ট খাল পর্যন্ত নতুন নালা তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতেও আরও পরিকল্পনার প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে রাখা হয়েছে। তবে রেলের প্রয়োজনীয় অনুমতি না মেলায় দুর্গানগর স্টেশন সংলগ্ন পুর এলাকায় নতুন নিকাশি নালার কাজ করা যায়নি।
পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহ আগেই জানিয়েছিলেন, জমা জল বার করতে পৃথক নিকাশি নালা তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। সে কাজ শেষ হলে কমলাপুর পূর্ব-পশ্চিম, কালীধাম, পি কে গুহ রোডের বড় অংশ, রাধানগর-সহ ৬, ১০, ১১, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় জল জমার সমস্যা মিটবে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সেই কাজ করছে।