প্রতীকী ছবি।
বাড়ি ফাঁকা ভেবে চুরি করতে ঢুকেছিল সে। কিন্তু ভিতরে ঢুকে দেখে, ঘরে বছর দশেকের এক বালিকা রয়েছে। মেয়েটিকে দেখেই সে তার হাত-মুখ বেঁধে ফেলে। তার পরে লুঠপাট চালিয়ে চম্পট দেয়। বেলেঘাটার একটি বাড়িতে লুঠের ঘটনার তদন্তে নেমে বারুইপুরের বেদবেড়িয়া থেকে নুর ইসলাম শেখ ওরফে চাঁদ নামে বছর চব্বিশের ওই দাগি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাস জানিয়েছেন, কোনও আত্মীয় নন, ওই যুবকই সে দিন হানা দিয়েছিল ওই বাড়িতে। লুঠ হওয়া অধিকাংশ জিনিসই উদ্ধার করা হয়েছে তার কাছ থেকে।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বেলেঘাটার চাউলপট্টি এলাকায় একটি বাড়িতে ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ বাড়ির লোকজনকেই সন্দেহ করেছিল। কিন্তু তদন্তের আগেই কেন পুলিশ বাড়ির লোকজনকেই সন্দেহ করে বসল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের তদন্তের দক্ষতা নিয়েও। এই ঘটনায় আধুনিক প্রযুক্তিই শেষ পর্যন্ত মুখ রক্ষা করল তদন্তকারীদের।
কী ভাবে ভুল ভাঙল পুলিশের? প্রথমে রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। দেখা হয় স্থানীয় মোবাইল ‘টাওয়ার ডাম্পিং’ (কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ে কোন কোন মোবাইল নম্বর থেকে ফোন এসেছে কিংবা গিয়েছে, তা দেখে কাউকে খুঁজে বার করা)। এরই মধ্যে অন্য একটি থানার এক অফিসারের কাছে খবর আসে, আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় কিছু চোরাই মাল বিক্রির জন্য খদ্দের খুঁজছে এক যুবক। সঙ্গে সঙ্গে সেই যুবকের ছবি আনিয়ে তা ওই মেয়েটিকে দেখায় পুলিশ। মেয়েটি সেই ছবি দেখে দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করার পরে শুরু হয় ওই যুবকের খোঁজ। জানা যায়, বারুইপুরে বাবার দোকানে চোরাই জিনিসগুলি বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখে গিয়েছে ছেলে নুর ওরফে চাঁদ। বারুইপুরের বেদবেড়িয়ায় গিয়ে নুরকে ধরে আনে পুলিশ।
নুর জেরায় ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের। বাইরে থেকে দরজার হুড়কো টানা থাকায় ওই বাড়িতে ঢোকার সময়ে সে ভেবেছিল, ভিতরে কেউ নেই। কিন্তু ভিতরে ঢুকে সে দেখে, বছর দশেকের এক বালিকা মোবাইলে গেম খেলছে। নুর তখন তাকে বেঁধে ফেলে মুখে বালিশ চাপা দেয়। তার পরে জিনিস নিয়ে পালায়।
ওই দুষ্কৃতী ভেবেছিল, মুখ ঢাকা থাকায় বছর দশেকের মেয়েটি তাকে চিনতে পারবে না। কিন্তু মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা থাকলেও মেয়েটি যে মনে করে তার জামাকাপড়ের বর্ণনা দিয়ে ফেলবে, তা-ও মাথায় আসেনি নুরের। ডিসি (ইএসডি) জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আর মোবাইলের টাওয়ার থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করা ছাড়াও ওই বালিকার বিবরণও তদন্তে সাহায্য করেছে। উদ্ধার হয়েছে কয়েক হাজার টাকা-সহ বেশ কিছু সোনা ও রুপোর গয়না। এর আগেও শিয়ালদহের একটি চুরির ঘটনায় ধরা পড়েছিল নুর।