Menstruation

menstruation problems: ঋতু-সমস্যায় চিকিৎসা দিতে মোবাইলে গ্রুপ ‘প্যাডম্যানের’

কলকাতার বিভিন্ন গণশৌচাগারে ন্যাপকিন রাখার মাধ্যমে যে কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিলেন শোভন, এত দিনে তার পরিধি বেড়েছে অনেকটাই।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ ০৬:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

মেয়েদের ঋতু-স্বাস্থ্যের কথা ভেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্রতী তিনি। কিন্তু শুধু সেইটুকুতেই থামতে চান না ওই যুবক। তিনি চান, ওই সব এলাকার মেয়েদের ঋতু-সমস্যায় বা যে কোনও স্ত্রী-রোগের চিকিৎসা পৌঁছে যাক তাঁদের ‘হাতের মুঠোয়’। তাই শহরের একাধিক স্ত্রী-রোগ চিকিৎসককে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদের কাছে নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগটুকু পৌঁছে দিতে চাইছেন ‘প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

কলকাতার বিভিন্ন গণশৌচাগারে ন্যাপকিন রাখার মাধ্যমে যে কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিলেন শোভন, এত দিনে তার পরিধি বেড়েছে অনেকটাই। সুন্দরবন-পুরুলিয়া-বীরভূম, এমনকি উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের মেয়েদের জন্যও ন্যাপকিনের জোগান দিয়েছেন তিনি। এ বার নারী দিবসের প্রাক্কালে তার সঙ্গে টেলিমেডিসিনের সুযোগ মেয়েদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাইছেন তিনি। শোভনের কথায়, ‘‘অতিমারি-যুগে শহরে টেলিমেডিসিন জনপ্রিয় হলেও গ্রামে ততটা চল নেই। গ্রামাঞ্চলে মহিলা স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকও সে ভাবে থাকেন না। ফলে মেয়েরা স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তাই ফোনে ফোনে যাতে চটজলদি চিকিৎসা পেতে পারেন তাঁরা, সে কারণেই এই উদ্যোগ।’’

কিন্তু কী ভাবে? শোভন জানাচ্ছেন, ন্যাপকিন বিলির জন্য যে সব জায়গায় তাঁর ইউনিট রয়েছে, সেখানে স্থানীয় দু’-এক জন মেয়েকে ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজে লাগানো হবে। ডাক্তারদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত থাকবেন তাঁরা। গ্রামীণ মহিলাদের শারীরিক সমস্যা বা ঋতু-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অসুস্থতার কথা গুছিয়ে লিখে অথবা ভয়েস রেকর্ডের মাধ্যমে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়ার দায়িত্বও তাঁদের। এর পরে সমস্যা বুঝে গ্রুপে থাকা কোনও চিকিৎসক ওষুধ বা পরামর্শ লিখে দেবেন। এমনই এক জন ভলান্টিয়ার, পাথরপ্রতিমার সুচিত্রা জানা বলছেন, ‘‘ন্যাপকিন বিলি করতে গিয়ে অন্তরঙ্গতার সুবাদে আমাদের কাছে অনেকেই তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। তাই ওঁদের অসুস্থতার কথা জানতে সমস্যা হবে না। দায়িত্ব বাড়ছে ঠিকই, তবে কিছু মেয়েকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারব।’’

Advertisement

আপাতত সুন্দরবনের কুমিরমারী, পাথরপ্রতিমা, হিঙ্গলগঞ্জ, কুলপি, ক্যানিং, মিনাখাঁ, সাগর, পুরুলিয়ার কয়েকটি গ্রাম, বীরভূমের বোলপুর, ইলমবাজার, শিলিগুড়ির কিছু চা-বাগানের ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে নিখরচায় কলকাতার চিকিৎসকের পরামর্শ পাবেন মেয়েরা। কলকাতা ও শহর সংলগ্ন কিছু বস্তি এলাকাতেও এই সুবিধা মিলবে। শোভন ছাড়াও গ্রুপে থাকবেন শহরের ছ’জন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক ও ৩৫ জন ভলান্টিয়ার। পরিধি বাড়লে এলাকাভিত্তিক গ্রুপ করার কথাও মাথায় রয়েছে।

আপাতত সুন্দরবনকেই পাখির চোখ করে এগোতে চাইছেন বাঁশদ্রোণীর ওই তরুণ। শোভনের কথায়, ‘‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অধিকাংশ সময়েই চিকিৎসক মেলে না। কুমিরমারী থেকে নিকটবর্তী গোসাবা হাসপাতালে যাওয়া মানে নৌকা, অটোয় চার-পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা। স্ত্রী-রোগের ক্ষেত্রে মেয়েদের ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতার হাসপাতালে যেতে বলা হয়। ফলে অনেকেই চিকিৎসা করাতে চান না। ফল হয় মারাত্মক। স্বাস্থ্য শিবির হলেও তাতে চটজলদি সমাধান মেলে না। এতে সময় মতো ওষুধ বা পরামর্শটুকু পাওয়া যাবে।’’ তবে চা-বাগানের মেয়েরা স্মার্টফোন ব্যবহারই করেন না, সুন্দরবনে ইন্টারনেট পরিষেবা সব সময়ে মেলে না— এই সমস্যাগুলির মোকাবিলা করবেন কী ভাবে, সেটাই আপাতত ভাবাচ্ছে শোভনদের।

এই কাজের সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক বাসুদেব মুখোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়, বাসব মুখোপাধ্যায়, এম পদ্মজা ভট্টাচার্য এবং ইন্দ্রনীল সাহা। বাসববাবু বলছেন, ‘‘অনেক মেয়েই নিজের অসুখের কথা বলতে পারেন না, ডাক্তারের পরামর্শও পান না, আন্দাজে ওষুধ খান। তাই ফোনে পরামর্শ দিয়ে যতটা সাহায্য করা সম্ভব, ততটা আপ্রাণ চেষ্টা করব। ফোনের মাধ্যমে ওঁদের কাছে পৌঁছে যেতে পারব, সেটাই বড় ব্যাপার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement