চিন্তা বেড়েছে পুর কর্তৃপক্ষের। ফাইল চিত্র।
২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে শুধুমাত্র দক্ষিণ কলকাতা থেকেই সম্পত্তিকর বাবদ আদায় ১৪ কোটি টাকা কমেছে কলকাতা পুরসভার। যা চিন্তা বাড়িয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের। কারণ তাঁদের মতে, শহরের বাকি অংশের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতা থেকে সম্পত্তিকর বাবদ আদায় বরাবর বেশি হয়। এই পরিস্থিতিতে চলতি আর্থিক বছরে (২০২২-’২৩) দক্ষিণ কলকাতা থেকে সম্পত্তিকর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে বিভাগীয় আধিকারিকদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে কলকাতা পুর এলাকা থেকে সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়েছিল ৮৫৮ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে সম্পত্তিকর বিভাগে ২৬ কোটি টাকা আদায় বাড়লেও সন্তুষ্ট নন পুর কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, পুরসভার রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান উৎস সম্পত্তিকর। কিন্তু বছরের পর বছর বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পত্তিকর আদায় না-হওয়ায় অনাদায়ী করের পরিমাণ পৌঁছেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকায়। পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘করখেলাপিদের থেকে অনাদায়ী টাকা আদায় না করলে কোষাগার ভরবে না। তাই চলতি আর্থিক বছরে সম্পত্তিকর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে সব বিভাগীয় আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
কোভিড অতিমারির কারণে ২০২০-’২১ সালে অনেকটাই কমেছিল সম্পত্তিকর থেকে পুর রাজস্ব আদায়। তবে, ওই বছরে ওয়েভার স্কিম থেকে কিছু টাকা এসেছিল পুর ভাঁড়ারে। যার জন্য কর আদায়ের ক্ষেত্রে ২০২০-’২১ আর্থিক বছরকে তুলনায় আনা হয়নি। এরই মধ্যে ২০১৯-’২০র তুলনায় ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে দক্ষিণ কলকাতায় সম্পত্তিকর আদায় কমায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের কাজে খুশি নন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, ২০১৯-’২০ সালে যেখানে দক্ষিণ কলকাতা থেকে সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়েছিল ৩৮৬ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা, ২০২১-’২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকায়।
প্রসঙ্গত, নতুন পুরবোর্ড গঠিত হওয়ার পরে কর মূল্যায়ন বিভাগের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আগে বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, কর আদায় না বাড়ালে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বদলি করা হবে। তার পরেও দক্ষিণ কলকাতায় কর বাবদ রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসেসর-কালেক্টরকে (এসি) বদলি করা হতে পারে বলে পুরসভার অন্দরের খবর।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ঠিকাদারের এক হাজার কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই টাকা পেতে নিত্যদিন পুরসভায় হাজির হচ্ছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি, বাজারেও বিপুল দেনা রয়েছে পুরসভার। নিয়মিত পেনশন পাচ্ছেন না অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীরা। আর্থিক সঙ্কটের জেরে কোপ পড়েছে পুর আধিকারিকদের টেলিফোন বিলেও।
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পুরসভার কোষাগার ভরে মূলত সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হওয়া টাকাতেই। কিন্তু ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ওই বিভাগে আদায় একেবারেই আশানুরূপ হয়নি। করখেলাপিদের থেকে বকেয়া টাকা আদায় না বাড়ালে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কঠিন হবে।’’