উত্তর কলকাতার বৈষ্ণব শেঠ স্ট্রিট। নিজস্ব চিত্র
বিপজ্জনক বাড়ির বিপদের অন্ত নেই! মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে শহরে ফের বাড়ি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল দু’জনের। পরিস্থিতি এমনই যে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসককে বলতে হল, ‘‘যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে, এমন ১০০টিরও বেশি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে শহরে।’’ কিন্তু প্রশ্ন, পরিস্থিতি জানা সত্ত্বেও পুরনো বাড়ির বিপদ এড়ানো যাচ্ছে না কেন? পুরকর্তারা অবশ্য এর জন্য দায়ী করেছেন নাগরিকদের একটি বড় অংশের সচেতনতার অভাবকেই।
চলতি বর্ষাতেই একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে শহরে। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েক জন। কলকাতা পুরসভার তথ্য বলছে, এই বর্ষায় শহরে ১৫টি বাড়ি ভেঙেছে। এ ছাড়া, বাড়ির ছোটখাটো অংশ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০টি। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বিপজ্জনক হিসাবে ঘোষিত নয়, এমন বাড়িও ভেঙে পড়েছে।
বুধবার আহিরীটোলায় বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। এ বিষয়ে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসীর একাংশ। কেন বিপজ্জনক বাড়ি থেকে আবাসিকদের সরানো অথবা সংস্কার করা যাচ্ছে না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও পুরকর্তাদের বক্তব্য, একাধিক বার পুর আইন সংশোধন করে, এমনকি একাধিক ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেও বাড়ি সংস্কারে উৎসাহিত করা যায়নি বাসিন্দাদের একাংশকে। এমনকি, সব জেনেশুনেও বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি নন তাঁরা।
মহাত্মা গাঁধী রোডে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
যদিও শহরের বেশ কিছু পুরনো বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কোথাও ভাড়াটে ও মালিকের বিবাদ, কোথাও আবার শরিকি বিবাদের ফাঁসে আটকে রয়েছে বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের কাজ। মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি বিপজ্জনক বাড়ির ভাড়াটে রঞ্জন প্রসাদ বললেন, ‘‘এক বার বাড়ি ছাড়লে আর ঢুকতে পারব কি না, জানি না। বাড়ি সংস্কারের আগে সেই নিশ্চয়তা তো দিতে হবে!’’ মৌলালির কাছে পুরনো ও জরাজীর্ণ একটি বাড়িতে তিন পুরুষের ভাড়াটে ভট্টাচার্য পরিবার। পরিমল ভট্টাচার্য নামে ওই পরিবারের এক সদস্যের দাবি, ‘‘বার বার বলা হলেও বাড়ির মালিক সংস্কার করেননি। শরিকি মামলার জটে ভগ্নপ্রায় বাড়িতেই দিন কাটাচ্ছি।’’
শহরে বাড়ি ভেঙে মৃত্যু এই প্রথম নয়। বছরখানেক আগে মধ্য কলকাতার দুর্গা পিতুরি লেনে বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। কাউন্সিলরের কাছে বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের আবেদন জানিয়ে ফেরার পথেই বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর জানতে পারেন এক ভাড়াটে। তালতলার কাছে ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটেও কয়েক বছর আগে বাড়ি ভেঙে প্রাণ গিয়েছিল দু’জনের। মৃতদের মধ্যে একটি শিশুও ছিল। এ ছাড়া, গত কয়েক বছরে বড়বাজার, আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ দিন শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বিপদের আশঙ্কা উপেক্ষা করেই জীর্ণ বাড়িতে বসবাস করে চলেছেন বাসিন্দারা। বহু বাড়িতেই ঝুলছে পুরসভার তরফে টাঙিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক বাড়ির নোটিস। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর এক সদস্য বললেন, ‘‘পুরসভার তরফে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হলেও আইনের গেরোয় বাড়ি থেকে কাউকে সরে যেতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। ফলে সচেতন করা ছাড়া পুরসভার কাছে আর কোনও উপায় নেই।’’