মিডিয়ার সামনে বন্দর কর্তৃপক্ষকে দখল জমি ফিরিয়ে দিল ভেঙ্কটেশ

গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারাতলার পি-৫১ হাইড রোডে বেআইনি ভাবে আটকে রাখা ১০০ কাঠা জমির দখল নিতে গিয়ে প্রবল বাধার মুখে পড়ে ফিরতে হয়েছিল কলকাতা বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:৩১
Share:

দু’মাসেই ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে!

Advertisement

গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারাতলার পি-৫১ হাইড রোডে বেআইনি ভাবে আটকে রাখা ১০০ কাঠা জমির দখল নিতে গিয়ে প্রবল বাধার মুখে পড়ে ফিরতে হয়েছিল কলকাতা বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীদের। অভিযোগ ছিল, দখলকারীদের লোকজন রীতিমতো মারধর করে তাণ্ডব চালিয়ে বন্দরের লোকজনদের বের করে দেয়। সে দিন রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। খবর সংগ্রহ করতে গেলে কিল-চড়-লাঠির আক্রমণ নেমে এসেছিল সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদের উপরে। সে দিনের ঘটনার সময় ত্রিসীমানায় পুলিশের দেখা মেলেনি।

শনিবার, দু’মাসের মাথায় সেই জমিতেই বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংবাদমাধ্যমকে সাদরে ডেকে নিলেন জবরদখলকারী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের লোকেরা। ছিলেন প্রচুর সংখ্যায় পুলিশও। বাধা দূরে থাক, উর্দিধারীদের উপস্থিতিতে, ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে দখল জমি বন্দরকর্তাদের হাতে তুলে দিলেন শ্রীকান্ত মোহতার লোকেরা।

Advertisement

জমি-হস্তান্তর করতে সব মিলিয়ে আধ ঘণ্টাও লাগেনি। সে সব মিটে যেতেই এক পুলিশকর্মীর ফিসফিসানি, ‘‘আপনারা না থাকলে এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব হত না।’’

বন্দরের জমি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ভেঙ্কটেশকে এক মাস সময় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মতো হাতে আরও দু’দিন সময় ছিল। কিন্তু তার আগেই এ দিন দখল জমি বন্দর কতৃর্পক্ষের হাতে তুলে দিতে সকাল ১১টায় হাইড রোডের ঘেরা স্টুডিও চত্বরে হাজির হয়েছিলেন ভেঙ্কটেশের লোকেরা। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘১৩ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হতেই গোটা পরিস্থিতি বদলে যায়। আর কিছু করা যাবে না বুঝে তার পর থেকেই আমরা স্টুডিওর মালপত্র সরাতে শুরু করি। তাই স্টুডিওগুলিতে এখন আর বিশেষ সরঞ্জাম নেই।’’

ঘটনাও তাই। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, স্টুডিওগুলো কার্যত শুনশান। পড়ে থাকা কিছু কাঠের সরঞ্জাম সরাতে ব্যস্ত ভেঙ্কটেশের লোকজন। সঙ্গে চারটি পোষা কুকুরকেও গাড়িতে তোলা হল। ‘‘আমরা আর এখানে থাকছি না। কুকুরগুলি না খেয়ে মরে যাবে। তাই নিয়ে যাচ্ছি।’’ — বললেন ওই কর্তা।

জমি ফেরাতে এ দিন ১১টা নাগাদ চলে এসেছিলেন ভেঙ্কটেশের লোকেরা। বন্দরের কর্তারা আসেন তার ঘণ্টাখানেক পর। তাঁদের মধ্যে সামান্য কথাবার্তা হয়। তার পরেই ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার শুভেন দাস বন্দরের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এস্টেট ম্যানেজার মলয় বন্দোপাধ্যায়কে বলেন, ‘‘এ বার আপনারা থাকুন, আমরা চলি।’’ যে জমি দখল করে গত তিন বছর রীতিমতো দাপিয়ে বেড়িয়েছে ভেঙ্কটেশের লোকেরা, কাজ সেরে সেখান থেকে কার্যত নিঃশব্দেই বেরিয়ে গেলেন শুভেনবাবু। মাঝে এক বার শুধু পাঁচটি স্টুডিও ঘুরে দেখে নেন।

পরে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে আগেই বন্দরের হাতে জমি ফিরিয়ে দিলাম। আমরা ওখান থেকে সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছি।’’ জমিকে কেন্দ্র করে তাঁদের এই হেনস্থার জন্য এলএমজে সংস্থাকেই সরাসরি দায়ী করেন শুভেনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এলএমজে-র সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। সেইমতো তাদের মাসে ১২ লক্ষ টাকা ভাড়া দিতাম।’’ প্রতারণা করার জন্য এলএমজে-র বিরুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছি।’’

জমি হাতে পেয়ে মলয়বাবুর চোখেমুখেও স্বস্তির ছাপ। তাঁর কথায়, ‘‘পি-৫১ ঠিকানার সম্পত্তি আমরা পুরোপুরি দখল নিয়েছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কর্তৃপক্ষ যাবতীয় চাবি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।’’ তিনি আরও জানান, পরবর্তী ক্ষেত্রে ওই ঠিকানায় ভাড়া দিতে তাঁরা টেন্ডার ডাকবেন। এ দিন সম্পত্তি হাতে নেওয়ার পর বন্দরের তরফে দুই গেটেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভিতরে মোতায়েন করা হয় বন্দরের নিরাপত্তারক্ষী। বন্দরের তরফে জানানো হয়েছে, তিনটি শিফটে পাঁচ জন করে বন্দরের নিরাপত্তারক্ষী হাইড রোডে মোতায়েন থাকবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement