পুজোয় যানজট আটকাতে নানাবিধ পরিকল্পনা করা হলেও তাই চিন্তামুক্ত হতে পারছে না পুলিশ। ফাইল ছবি
উৎসবে দর্শনার্থীদের ভিড় সামলানো গেলেও পুজোর দিনগুলিতে তাল কাটবে না তো মণ্ডপ সংলগ্ন বেআইনি পার্কিং? তার জেরে থমকে যাবে না তো শহরের গতি? ভিড় সামলানোর তোড়জোড়ের পাশাপাশি, পুজোয় বেআইনি পার্কিং রুখে শহর সচল রাখাও এ বছরের বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন পুলিশকর্তারা। পুজোয় যানজট আটকাতে নানাবিধ পরিকল্পনা করা হলেও তাই চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না তাঁরা।
করোনার কারণে গত দু’বছর শহরের পুজোর ছবিটা ছিল অন্য রকম। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। পথেঘাটে ভিড়ও তাই ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। এ বছর এমন কোনও বিধিনিষেধ নেই। তার উপরে কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বার শহরের রাজপথে ভিড় যে কয়েক গুণ বাড়বে, সেই বিষয়ে কার্যত নিশ্চিত পুলিশকর্তা থেকে শুরু করে পুজো উদ্যোক্তারা। মহালয়ার পর থেকেই শহরের বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপে তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে। ইতিউতি গাড়ি থামিয়ে, লাইন দিয়ে বেশ কয়েকটি নামী পুজো মণ্ডপে ভিড় জমতেও দেখা গিয়েছে। এমনকি বড় মণ্ডপ সংলগ্ন একাধিক রাস্তায় এখন থেকেই গাড়ির গতি কমেছে। দীর্ঘ যানজটের ফাঁসে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দেবীপক্ষের শুরুতেই এই হাল হলে পুজোর দিনগুলিতে বেলাগাম বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে পরিস্থিতি কী হবে, তা-ই এখন মাথাব্যথার কারণ ট্র্যাফিক কর্তাদের। রাতের পাশাপাশি, দিনেও মণ্ডপ সংলগ্ন রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিমা দর্শনের প্রবণতা ভাবাচ্ছে পুলিশ ও পুজো উদ্যোক্তাদের। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকেও যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন একাধিক পুজোকর্তা।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুজোর ক’দিন শহরের পার্কিং জ়োনগুলি ছাড়া কোন কোন মণ্ডপের আশপাশে বেআইনি পার্কিং হয়, সে সংক্রান্ত তথ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে লালবাজার। কোথায় কোথায় দর্শনার্থীদের জন্য গাড়ি দাঁড় করানোর ব্যবস্থা থাকে এবং তা মণ্ডপ থেকে কতটা দূরে— ট্র্যাফিক গার্ডগুলি থেকে সেই তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুজোয় ভিড় টানা দেশপ্রিয় পার্ক, চেতলা অগ্রণী, একডালিয়া এভারগ্রিন, কলেজ স্কোয়ার, বোসপুকুরের মতো একাধিক বড় পুজো সংলগ্ন রাস্তায় বেআইনি পার্কিং আটকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখার কথা বলা হয়েছে বলে খবর।
পুজোর ক’দিন বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি ও মালবাহী গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় একাধিক রাস্তাও। কিন্তু সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকে। তাই সেই সুযোগে বেলার দিকে গাড়ি নিয়ে প্রতিমা দর্শনের প্রবণতাও বেশি থাকে বলে দাবি ট্র্যাফিক আধিকারিকদের। তাই সেই সময়েও বেআইনি পার্কিংয়ের ঝঞ্ঝাট এ বার মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছে ট্র্যাফিক গার্ডগুলি। এক ট্র্যাফিক আধিকারিক বলেন, ‘‘নো পার্কিং আর নো এন্ট্রিতে কোনও নিয়ম মানার বালাই থাকে না। নজর সরালেই পর পর গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। গত বছর ভিড় কম থাকায় তা-ও সামাল দেওয়া গিয়েছিল। এ বছর কী হবে, সেটাই ভাবছি!’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর পুজোর ক’দিন বেআইনি পার্কিং করার কারণে চারশোরও বেশি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, আটক করা হয়েছিল একাধিক গাড়ি। এ বছর সেই চাপ কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন ট্র্যাফিক কর্তাদের একাংশ। যদিও কলকাতা পুলিশের এক ট্র্যাফিক-কর্তা জানান, ‘‘কী হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির কথা ভেবে একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোনও ভাবেই যত্রতত্র পার্কিং বরদাস্ত করা হবে না। গার্ডগুলিকে সেই অনুযায়ী নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’’