পুড়িয়েছে স্বামীই, বধূর শেষ বার্তা ভিডিয়োয়

শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভিডিয়ো-বার্তায় অগ্নিদগ্ধ বধূ জানিয়ে গেলেন, তাঁর এই পরিণতির জন্য কারা ‘দায়ী’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

স্বামীর সঙ্গে সঙ্গীতা দাস। ফাইল চিত্র

শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভিডিয়ো-বার্তায় অগ্নিদগ্ধ বধূ জানিয়ে গেলেন, তাঁর এই পরিণতির জন্য কারা ‘দায়ী’। আট দিনের লড়াই শেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় সঙ্গীতা দাসের (২২) মৃত্যু হলে পণের জন্য নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে তাঁর স্বামী অমরনাথ দাস, শাশুড়ি রিনা দাস এবং তনয়া চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর রাতে বাগুইআটির জগৎপুরের আদর্শপল্লির ভাড়াবাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ সঙ্গীতাকে উদ্ধার করা হয়। সেই ইস্তক কলকাতা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিলেন তিনি। সঙ্গীতার বাবা পেশায় গাড়িচালক দিলীপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পণ নিয়ে অত্যাচার ছিলই। উপরন্তু অন্য এক তরুণীর সঙ্গে অমরের সম্পর্কও তৈরি হয়। মেয়ে প্রতিবাদ করলে স্বামী ও শাশুড়ি খুব অত্যাচার করত। শেষে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারল।’’ তরুণীর মা সন্তোষী চক্রবর্তী বলেন, শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিতা হয়েও সে সব কথা কোনও দিনই বাপের বাড়িতে বলেননি সঙ্গীতা।

শেষ মুহূর্তে অবশ্য মুখ খুললেন তিনি। ওই ভিডিয়োয় সঙ্গীতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কে তাঁর গায়ে আগুন দিয়েছে? শরীরের ৮২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া বধূ সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে গলা ছেড়ে বলেন— ‘‘অমর।’’ কী হয়েছিল? সঙ্গীতা বলেন, ‘‘অমর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে দেয়। আগুন নেভাতে মা’কে ডাকতে গিয়েছিল। অমর, আমার শাশুড়ি এবং তনয়া চট্টোপাধ্যায়ের শাস্তি চাই।’’ পুলিশ জানায়, যে তরুণীর সঙ্গে অমরের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ, তাঁরই নাম তনয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন: নির্যাতনের তিক্ত অতীত ভুলে স্নেহের কাছে হার মানছেন ওঁরা

মৃতার আত্মীয় নান্টু চক্রবর্তী জানান, অমরের সঙ্গে মালদহের বাচামারির বাসিন্দা সঙ্গীতার আলাপ ফেসবুকে। সেই থেকে প্রেম এবং বিয়ে। নান্টুবাবুর কথায়, ‘‘অমর নিজেকে প্রথমে গ্রিল কারখানার মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। পরে জানতে পারি, ও গ্রিল কারখানায় কাজ করে। বিয়ের পরে সেই কাজও ছেড়ে দিয়েছিল।’’

সঙ্গীতার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবরটাও তাঁর বাপের বাড়িতে প্রথমে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার অমর-সঙ্গীতার বাড়িওয়ালা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় মালদহে ফোন করে সব জানান। জয়ন্তবাবু রবিবার বলেন, ‘‘২৬ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফেরে সঙ্গীতা। তিন মাস ওরা ভাড়া দেয়নি। কবে দেবে জানতে চাওয়ায় সঙ্গীতা বলে, দু’-এক দিনের মধ্যেই দেবে।’’ সঙ্গীতারা ঘরে ঢোকার পরেই দু’জনের অশান্তি শুরু হয় বলে জানান তিনি। ঘণ্টাখানেক পরে অমর সকলকে ডেকে বলেন, তাঁর স্ত্রী গায়ে আগুন দিয়েছেন। অমরকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন: বাজ থেকে বাঁচতে যন্ত্র বসবে ম্যাডক্সে

প্রাথমিক তদন্তের পরে লিখিত অভিযোগে নাম থাকা তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে তাঁদের ৯ দিনের জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement