জঞ্জালে আগুন, অমরাবতী যেন সোদপুরের নয়ডা

এত দিন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেখানে জনবসতি বিশেষ ঘন নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৬
Share:

দূষিত: আবর্জনা পোড়ার ধোঁয়ায় সন্ধ্যার দিকে এমনই অবস্থা হচ্ছে অমরাবতী এলাকার। নিজস্ব চিত্র

এত দিন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেখানে জনবসতি বিশেষ ঘন নয়। তাই জঞ্জাল পোড়ালেও তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকায় জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরানোর ফলে গত তিন দিন ধরে ভয়াবহ দূষণের মুখে পড়েছেন সোদপুরের অমরাবতী এলাকার বাসিন্দারা। দমকল ডেকে আগুন নিভিয়েও সুরাহা হয়নি। ঘটনার তিন দিন পরেও ওই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বয়স্করা। এমনকি, কয়েকটি শিশুও অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

Advertisement

অমরাবতী পানিহাটি পুরসভা এলাকায়। বর্তমানে এই পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়েছে। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক প্রশাসক হিসেবে কাজ করছেন। তার ফলে এলাকার বাসিন্দারা পুরসভায় গিয়ে তেমন সুফল পাননি। এই অবস্থায় কী করবেন, কোথায় যাবেন, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম বলেন, ‘‘এই সমস্যার কথা জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করব।’’

Advertisement

অমরাবতীর মেলার মাঠে শীতভর মেলা ও নানা অনুষ্ঠান হয়। তার ফলে প্রচুর খাবারের দোকানও বসে। সেই জন্য কাগজ-থার্মোকলের প্লেট-সহ বিভিন্ন বর্জ্য মাঠে জমা হয়। সেই সব বর্জ্য মাঠের এক পাশে জমা হয়ে থাকে। এলাকার বাসিন্দা পিকলু সেনগুপ্তের অভিযোগ, বছরখানেক আগে থেকে পুরসভার জঞ্জালও ওই মাঠে ফেলা হচ্ছে। তার ফলে মাঠে কার্যত জঞ্জালের পাহাড় তৈরি হয়ে দূষণ ছড়াচ্ছিল। গন্ধে টেকা দায় হচ্ছিল বাসিন্দাদের।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে কে বা কারা ওই জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেই আগুন ভয়াবহ আকার নেয়। ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে চারপাশ। একাধিক বহুতল-সহ এলাকার বিভিন্ন বাড়িতেই বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকে পড়ে।

সুচন্দ্রা সরকার নামে এক বাসিন্দার কথায়,‘‘ধোঁয়ায় আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। দরজা-জানালা আটকেও লাভ হয়নি। পরিস্থিতি রাতে এতটাই খারাপ হয় যে বাচ্চাদের দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হই।’’ সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় নামে অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ধোঁয়ায় আমার মা এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে তাঁর চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’’

অবস্থা বেগতিক দেখে বাসিন্দারা খড়দহ থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দমকল ডাকে। দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। এলাকার বাসিন্দা গোপাল সাহা জানান, দমকল জল ঢাললেও আগুন পুরোপুরি নেভেনি। ঘটনার তিন দিন পরে, সোমবারেও জঞ্জালের স্তূপে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। দিনে সমস্যা তেমন বোঝা না গেলেও রাতের দিকে অবস্থা ভয়াবহ হচ্ছে। ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়ে কয়েক জন বৃদ্ধ। শীতে বিকেলের পর থেকে হাওয়া ভারী হওয়ার ফলে ধোঁয়া উপরে উঠতে না পেরে সমস্যা বাড়ছে।

বিরাটি থেকে শুরু করে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর রাস্তার দু’দিকেই জঞ্জাল ফেলা হয়। সেই জঞ্জালের স্তুপে মাঝেমধ্যেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই জঞ্জালের স্তুপে আগুন লাগানোর ফলে পরিবেশ কী ভাবে দূষিত হয়, তা টের পাচ্ছেন অমরাবতী এলাকার বাসিন্দারা। ফাঁকা এলাকাতেও একই রকম দূষণ হয়। প্রশাসনের উচিত ক়ড়া হাতে তা দমন করা। অমরাবতী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রশাসন অবিলম্বে ওই মাঠে জঞ্জাল ফেলা বন্ধ করুক। তা না হলে ফের কেউ তাতে আগুন দিলে সমস্যা ফের ভয়াবহ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement