উদ্যাপন: আলোকমালায় সাজানো বো ব্যারাকের পথে উৎসবমুখী মানুষ (উপরে)। নিউ টাউনের ইকো পার্কে ভিড় (নীচে)। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
দিনভর যেন একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। ভিড়ের নিরিখে এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি লোকের উপস্থিতির রেকর্ড করে ফেলেছে নিউ টাউনের ইকো পার্ক। সেখানে রবিবার বড়দিনের প্রাক্কালে ৭০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল বলে দাবি করলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক দিনের তাপমাত্রার বৃদ্ধিকেও যেন পিছনে ফেলার লড়াই চালালো এ দিন। পারদ চড়েছে আরও কিছুটা।
গত বুধবার থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা এ দিনও বজায় ছিল। আলিপুর হাওয়া অফিস এ দিন জানিয়েছে, বুধবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ১৫.২ এবং ১৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে যা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। রবিবার সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়েছে ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে যা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন ছিল ২৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে যা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ‘‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দু’-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকায় তবু শীতের আমেজ ছিল। এ দিন সেটাও অনেকটা কমে গিয়েছে।’’
২০২২ সালের বড়দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা মনে করিয়ে অনেকের প্রশ্ন, কলকাতায় তবে কি এটাই রীতি হয়ে যাচ্ছে। এ বারের বড়দিন কতটা উষ্ণ হয়, সেটাই এখন দেখার। তবে এ সব নিয়ে বিশেষ ভাবার ফুরসত উৎসবমুখী জনতার রয়েছে বলে মনে হয়নি এ দিন। শহরে ঘুরে ভিড় দেখা গেল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে জনস্রোত বইছে চিড়িয়াখানায়। একই রকম ভিড় জাদুঘর, সায়েন্স সিটি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জেল মিউজিয়াম, ইকো পার্ক, নিকো পার্কে।
সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিট ধরে এগিয়ে যাওয়া ভিড় দেখে প্রশ্ন আসে, বড়দিন কি আজই? এক তরুণী বলে ওঠেন, ‘‘রবিবারের আশপাশে বড়দিন পড়লে উৎসব আগেই শুরু হয়। এই ভিড়টা কাল সকালে ঘুমিয়ে বিকেলের পরে অন্য পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়ে পড়বে।’’ পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁর বাইরে দাঁড়ানো তরুণীর মন্তব্য, ‘‘শীত বেশি নেই বলে ভালই হয়েছে। মনের মতো সেজেগুজে বেরোনো যাচ্ছে।’’
চিড়িয়াখানার গিজগিজে ভিড়ে দেখা গেল অনেকেই শীতের পোশাক ব্যাগে ভরে রেখেছেন। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘৭০ হাজার লোক হয়েছিল। বড়দিনে এই ভিড়টা ৯০ হাজার ছড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছি।’’ ভারতীয় জাদুঘরে অবশ্য এ দিন সব মিলিয়ে সাড়ে আট হাজারের মতো দর্শকের ভিড় হয়েছিল। জাদুঘরের তরফে সায়ন ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আসেন এখানে। পিকনিক স্পট যে হেতু নয়, ভিড়ও কম হয়। তবে এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত এটাই বেশি ভিড়।’’ কলকাতার ভ্রমণ তালিকায় জায়গা করে নেওয়া জেল মিউজিয়ামের কর্তা জয়ন্ত সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘এখানে এ দিন আট হাজার মতো ভিড় হয়েছিল। সন্ধ্যার আলো-ধ্বনির প্রদর্শনী অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠছে।’’ ইকো পার্কের ব্যাপারে নিউ টাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটির এক কর্তা বললেন, ‘‘গত কয়েক বছরে নিউ টাউনে প্রচুর বিনোদন পার্ক তৈরি হয়েছে। এ বছরের বড়দিনে পুরনো ভিড়ের সব রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে।’’
কে রেকর্ড ভাঙবে, সে তো রাত পোহালেই জানা যাবে। তবে সন্ধ্যায় মেট্রোর ভিড়ের আঁচ মিলেছিল এ দিন সকালেই। ময়দান, ভিক্টোরিয়া, তারামণ্ডল, চিড়িয়াখানাগামী ভিড় রবীন্দ্রসদন থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে বিভিন্ন স্টেশনে আছড়ে পড়ছিল তখনই। সন্ধ্যায় অ্যালেন পার্ক এবং পার্ক স্ট্রিট চত্বরকে কেন্দ্র করে মেট্রোয় ঢল নামে যাত্রীদের। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ দিন মেট্রোয় ২ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি যাত্রী সফর করেছেন। ওই সময়ের মধ্যে দমদমে ৩০২৩৭, এসপ্লানেডে ২২১১৮, রবীন্দ্রসদনে ১৭৯২৮ এবং দক্ষিণেশ্বর মেট্রোয় ১৬১৫৩ জন যাত্রী সফর করেছেন বলে জানিয়েছেন মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধরলে গত বছরের এই দিনের তুলনায় এ বছর ৫৫ হাজার যাত্রী মেট্রোয় বেশি সফর করেছেন বলে জানাচ্ছেন তিনি।