উদ্বেগ: দু’বছরে বেশির ভাগ সময়ে অনলাইন ক্লাস করার পরে অফলাইনে উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে সন্তানেরা। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে চিন্তিত উপস্থিতি অভিভাবকদের। শনিবার, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতো নোটসে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল এক পরীক্ষার্থী। পাশে মা। প্রস্তুতি কেমন হয়েছে? ওই পরীক্ষার্থীর জবাব, “বাংলা পরীক্ষা নিয়ে অতটা চিন্তা নেই। চিন্তা তো বিজ্ঞান নিয়ে। কারণ, বিজ্ঞানে আমার প্রস্তুতি তেমন ভাল অবস্থায় নেই।”
শুধু ওই কিশোরীই নয়, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দিন পরীক্ষা দিতে এসে অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই জানাল, প্রস্তুতি আরও ভাল হতে পারত, যদি তারা গত দু’বছরের মধ্যে অন্তত একটা বছর স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারত।
হোলি চাইল্ড স্কুলের সামনে দাঁড়ানো এক পরীক্ষার্থীর কথায়, “অঙ্কের মতো বিষয় কি অনলাইনে সব সময়ে বোঝা সম্ভব? অঙ্ক বোঝার ক্ষেত্রে মনে নানা রকম প্রশ্ন আসে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকের কাছে আলাদা করে গিয়ে অঙ্ক বুঝে নেওয়ার উপায় থাকে না। তা ছাড়া, নেটওয়ার্কের সমস্যা তো আছেই।”
পরীক্ষার্থীদের একাংশ জানাল, শুধু অঙ্ক নয়, প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস-নির্ভর কোনও বিষয়েরই প্রস্তুতি খুব ভাল হয়নি। প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস না হওয়ায় বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে তাঁদের সব ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। যে সমস্ত বিষয় পরীক্ষায় আসতে পারে, সেই সংক্রান্ত কিছু প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস হয়েছে। কিন্তু গোটা সিলেবাসের উপরে হয়নি। এক পরীক্ষার্থী বলল, “কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে পুরো সিলেবাসের উপরে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস না হলে কি ওই বিষয়ের সব কিছু বোঝা সম্ভব? ফলে পরীক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাসও সে ভাবে তৈরি হয়নি।”
হিন্দু স্কুলের সামনে দাঁড়ানো এক অভিভাবকের মতে, গত দু’বছরে অনলাইন ক্লাস করতে করতে তাঁর ছেলের মোবাইলে আসক্তিও মারাত্মক বেড়ে গিয়েছে। ওই অভিভাবক জানান, তিনি নিজেও বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন বলে লক্ষ রাখতেন, ছেলে কী করছে। দেখতেন, অনলাইন ক্লাসের মধ্যেই ছেলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট দেখছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ করছে। ওই অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে মধ্য মেধার। মনোযোগ কম। সব সময়ে কত আর চোখে চোখে রাখা যায়? অফলাইনে ক্লাস হলে প্রস্তুতি হয়তো আরও ভাল হত। বিজ্ঞানের প্রস্তুতি ভাল হয়নি।”কয়েক জন অভিভাবক জানালেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা সিলেবাসই শেষ করতে পারেনি। স্কুল বা অনলাইন কোচিংয়েও সিলেবাস শেষ হয়নি। সিলেবাসের বেশ কিছু অংশ বাড়িতে নিজেদের পড়তে হয়েছে।
অভিভাবকেরা জানালেন, টানা দু’বছর বাড়িতে থেকে ছেলেমেয়েরা অনেকেই খিটখিটে হয়ে গিয়েছে। এক অভিভাবক বললেন, “করোনার আতঙ্ক ওদের মনেও প্রভাব ফেলেছিল। আত্মীয়-পরিজনের মৃত্যুও দেখেছে ওরা। তার মধ্যে কি মন দিয়ে পড়াশোনা করা যায়?”
তবে এখন করোনার আতঙ্ক কমে যাওয়ায় খুশি সকলেই। পরীক্ষার্থীরা জানাল, করোনা কমলেও মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করেছে তারা। প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষা মাস্ক পরেই দিয়েছে সকলে। শহরের বিভিন্ন স্কুলেও পরীক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ। কোনও পরীক্ষার্থী মাস্ক আনতে ভুলে গেলে তাকে তা দেওয়া হয়েছে।