কলেজ মোড়ে প্লাস্টিক হাতে এক ব্যক্তি। বুধবার, সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বৃষ্টিতে জল জমে মাঝেমধ্যেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে সল্টলেকের শিল্পতালুক। এর উপরে রয়েছে দূষণ। এই জোড়া বিপদের অন্যতম কারণ হিসেবে ইতিমধ্যেই প্লাস্টিককে চিহ্নিত করেছে সেখানকার প্রশাসনিক সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন শিল্পতালুকে প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে না? নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষও ওই দাবি সমর্থন করে জানিয়েছেন, তাঁরা প্লাস্টিক সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করার পক্ষে। কিন্তু কী ভাবে সেটি করা যাবে, তার রূপরেখা এখনও তৈরি করা যায়নি। দ্রুত পরিকল্পনা করে বিষয়টি কার্যকর করার চেষ্টা চলছে।
শিল্পতালুককে পরিবেশবান্ধব উপনগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মঙ্গলবার বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে অন্য বিষয়ের সঙ্গে প্লাস্টিক-দূষণের প্রসঙ্গটিও ওঠে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কয়েক বছর আগে দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য তাঁর সাবেক ওয়ার্ড এলাকা বাঙুরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন। এখনও সেই ব্যবস্থা জারি আছে। তা হলে শিল্পতালুকে এমন পদক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের একাংশের কথায়, প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনও দিনই এই সমস্যা মিটবে না। একই সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবা প্রয়োজন। প্লাস্টিক উৎপাদনে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের মতে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে মাইক্রনের হিসেব না করে সম্পূর্ণ ভাবে প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্লাস্টিক বন্ধ করে আখেরে লাভ হবে না।
মৃগাঙ্কবাবু জানান, জনমত গঠন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্লাস্টিক বন্ধ করা গিয়েছিল। তবে পুরোপুরি এর ব্যবহার বন্ধ করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে চেষ্টা চালাতে হবে।
নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংস্থার অন্দরেই। কারণ, প্লাস্টিক পুরো বন্ধ করতে যে পরিমাণ অভিযান ও নজরদারি দরকার, সেই পরিকঠামো তাদের নেই। শিল্পতালুকে কাজের সূত্রে আসা লোকজন অধিকাংশই বাইরে থেকে যাতায়াত করেন। তাঁদের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে কী ভাবে এগোনো যায়, তার সম্ভাব্য রূপরেখা এখনও সামনে আসেনি।
তবে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, শিল্পতালুককে সবুজ শহর হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগ করে কী ভাবে আবর্জনা আলাদা করা যায়, সেগুলি পুনর্ব্যবহার করা যায়— সে সবের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পুনর্ব্যবহার নিয়েও পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। শিল্পতালুকের যে সব সংস্থা ভাল কাজ করবে, তাদের পুরস্কৃত করার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে।