পার্থ চৌধুরীর ছবি। —নিজস্ব চিত্র।
চারুকলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব শুধু আকস্মিকই নয়, সুদূরপ্রসারীও বটে। ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে, বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ গ্যালারি এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে, শিল্প ইভেন্ট এবং প্রদর্শনী অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা শুরু করা হয়। এমন আবহেই সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসাবে ‘প্রবাহ’ তার গ্রুপ সদস্যদের বর্তমান কাজগুলি প্রদর্শন করছে। ‘প্রবাহ’, এই গ্রুপটি তার চার সদস্য সত্যজিৎ রায়, পার্থ চৌধুরী, দেবাশিস দাস এবং মন্দিরা ভান্ডারীকে নিয়ে এই বছরের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এখানে প্রদর্শিত সত্যজিৎ রায়ের কাজগুলি বাংলা ক্যালেন্ডার-চিত্রের আঙ্গিকে করা। একটি ছবিতে দেখা যায়, সামনে রয়েছে এক বিশালাকার মাস্ক এবং পিছনের দিকে হনুমান তাঁর পরিচিত ভঙ্গিতে একটি মাস্ক বহন করছেন। অন্য ক্যালেন্ডারে রয়েছে শিবের জটা থেকে গঙ্গার মুক্তি পাওয়ার পুরাণ-কাহিনি। এখানে শিবের মাথা স্যানিটাইজারের বোতল হয়ে গেছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার নতুন ধর্মে পরিণত হওয়ার কথাই কি বলছেন শিল্পী? নাকি তার পরেও রয়েছে আরও কিছু? সাম্প্রতিক সময়ে মাথা চাড়া দেওয়া ধর্মীয় মৌলবাদের দিকেও কি ব্যঙ্গ করছে না এই সব ছবি?
এই অতিমারিই সময়ে কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের সমাজের পক্ষে ভাল ছিল না—পার্থ চৌধুরী তাঁর রচনায় পরিস্থিতিটি নিজের ভঙ্গিমায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন: প্রশান্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা গেল নতুন বেঞ্চে
অতিমারি আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যাঁরা এই অতিমারিতেতে মারা যাচ্ছেন, অনেক সময় আমরা তাঁদের শেষ সম্মানটুকুও দিতে পারছি না। তাঁদের দেহগুলি আবর্জনার স্তূপ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। মন্দিরা ভান্ডারী তাঁর চিত্রকর্মগুলির মাধ্যমে এই করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
আতঙ্ক উদ্ভূত হয় হতাশা, শূন্যতাবোধ এবং অবিশ্বাস থেকে। দেবাশিসের রচনাগুলি তাঁর মনের এমন এক অবস্থাকেই চিত্রিত করে, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা অবিরত যাচ্ছি।
সত্যজিৎ রায়, পার্থ চৌধুরী, দেবাশিস দাস এবং মন্দিরা ভান্ডারী—এই চার শিল্পীর ছবি।
পরিবর্তনশীল সমাজ, পরিবর্তিত যাপন এবং আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা দুঃসময় এই প্রদর্শনীর বিষয়। এই সব ছবি আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদেরই সামনে, যে সত্তাকে আমরা হয়তো এখনও সঠিক ভাবে চিনে উঠতে পারছি না।
লাইভ প্রদর্শনী নীচের এই লিঙ্কে ক্লিক করে দেখা যাবে।
https://www.facebook.com/