নতুন ঠিকানার খোঁজে রুপোলি চুলের মানুষেরা

কয়েক মাস পরেই তিরিশ বছরের পুরনো ঠিকানা ছেড়ে উঠে যাবেন। রেখে যাবেন তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার। তবে কি পরের প্রজন্মের সঙ্গে বনিবনার সমস্যা? না। একেবারেই না। দু’জনেই জানালেন, নিজেদের বদলে যাওয়া জীবনধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই ঠিকানা বদলাচ্ছেন। অন্য প্রজন্মের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে চান না।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৮:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

অবসর নেওয়ার পরে প্রবল উৎসাহে নতুন ফ্ল্যাট সাজাচ্ছেন কর্পোরেট জগৎ থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া ঘোষ দম্পতি। কয়েক মাস পরেই তিরিশ বছরের পুরনো ঠিকানা ছেড়ে উঠে যাবেন। রেখে যাবেন তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার।

Advertisement

তবে কি পরের প্রজন্মের সঙ্গে বনিবনার সমস্যা?

না। একেবারেই না। দু’জনেই জানালেন, নিজেদের বদলে যাওয়া জীবনধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই ঠিকানা বদলাচ্ছেন। অন্য প্রজন্মের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে চান না। কারণ বয়সের সঙ্গে প্রয়োজনগুলোও বদলে যায়। ঘোষ দম্পতির দাবি, শুধুই নিরাপত্তা, চিকিৎসা বা অন্যান্য দৈনন্দিন পরিষেবা নয়। সমবয়সি বন্ধু পেতেও ‘সিনিয়র সিটিজেন হাউজিং’ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

আর এই ‘সিলভার সুনামি’র চাহিদার দিকে নজর রেখেই বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, পুণের মতো এ শহরেও তৈরি হচ্ছে আবাসন। ক্রমশ বাড়তে থাকা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যার আর এক নাম সিলভার সুনামি বা রুপোলি ঢেউ।

ভারতে এই সংখ্যা ১১ কোটি। এই সুনামির হাত ধরেই আবাসন শিল্পে তৈরি হচ্ছে নতুন বাজার। দু’বছর পরেই যে-বাজার ছুঁয়ে ফেলবে ৪ হাজার কোটি টাকা।

ব্যবসার টানেই এই বাজারে পা রাখছে বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা। বয়স্ক ক্রেতাদের নজরে রেখে তৈরি হচ্ছে প্রকল্প। রাজস্থানের ভিওয়াডি থেকে শুরু। আলাদা করে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য প্রথম আবাসন তৈরি হয় ভিওয়াডিতে। এর পরে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, পুণের মতো শহরও তালিকায় যুক্ত হয়েছে। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। বিশেষজ্ঞদের দাবি, দেশ জুড়ে শুধু বয়স্কদের নজরে রেখে তৈরি হচ্ছে ৩০টির বেশি প্রকল্প।

তথ্য পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষের বয়স ৫৫ বছরের উপরে। বছরে সাড়ে তিন শতাংশ হারে বাড়ছে এই সংখ্যা। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে যাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ কোটি ৮০ লক্ষ। এই বিশাল সংখ্যার জোরেই আবাসন শিল্পে তৈরি হচ্ছে নতুন চাহিদা।

একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই চাহিদার বহর। ছোট-বড় ১৩৫টি শহরে বাস করেন প্রায় ২৩ কোটি মানুষ। তার মধ্যে এক কোটির বেশি পরিবারে রয়েছেন বয়স্করা। সমীক্ষায় স্পষ্ট ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা। তিন লক্ষ বাড়ির চাহিদা রয়েছে। বাজারে এ ধরনের বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০০০, যাতে চাহিদার মাত্র এক শতাংশ জোগানো যাবে।

বয়স্কদের জন্য আলাদা আবাসনের চাহিদার পিছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই। বদলে যাওয়া জীবনধারা, নতুন ধাঁচের পারিবারিক কাঠামো ও অবসরের পরেও ক্রয়ক্ষমতা হাতে থাকাই এ ধরনের বাড়ির ক্রেতা তৈরি করছে।

যে-সব সংস্থা এ ধরনের প্রকল্প তৈরি করছে, তারাও মাথায় রাখছে এই বাজারের চাহিদার ধরনের বিষয়টি। একটি নির্মাণ সংস্থার এমডি ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন তাঁরা। কারণ নিরাপত্তা ও চিকিৎসা পরিষেবাই এ ধরনের আবাসনের মূল আকর্ষণ। বাড়ির নকশাও বয়স্কদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে করা হয়। আর এক আবাসন সংস্থার কর্তা রাজীব ঘোষ জানান, শুধুই ‘স্কিড-ফ্রি টাইল’ বা হুইলচেয়ার চলার রাস্তা নয়। বয়স্কদের জন্য আবাসনে তৈরি হচ্ছে ‘স্যান্ডওয়াক’ বা বালির উপরে হাঁটার পরিকাঠামো। তাঁর দাবি, এ ধরনের পরিকাঠামোয় হাঁটা বয়স্কদের জন্য ব্যায়ামের কাজ করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement