প্রতীকী ছবি
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল শিশুকন্যা-সহ এক গৃহবধূর। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে মহেশতলা থানার রায়পুরের মণ্ডলপাড়া এলাকায়। মৃতার নাম ডালিয়া মুফতি (২২)। এই ঘটনায় ডালিয়ার স্বামী রহমান মুফতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরে কন্যাসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই গৃহবধূ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মণ্ডলপাড়ার বাড়িতে একতলায় দু’টি পাশাপাশি ঘরে থাকতেন ডালিয়া এবং তাঁর শাশুড়ি। দোতলায় রহমানের তিন দাদা সপরিবার থাকেন। ডালিয়ার শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় তিনি অনেক দিন ধরেই শয্যাশায়ী।পুলিশ জেনেছে, এ দিন ওই গৃহবধূ তাঁর বছর দেড়েকের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। সেই সময়ে মায়ের কাছেই ছিল পাঁচ বছরের বড় মেয়ে। সে ছুটে এসে ঠাকুরমাকে সব জানায়। ওই বৃদ্ধা শয্যাশায়ী থাকায় তাঁর বিছানার পাশে একটি কলিং বেলের সুইচের ব্যবস্থা করা আছে। কোনও প্রয়োজন হলে বৃদ্ধা সেই সুইচ টিপে দেন। এ দিন নাতনির মুখে সব শুনে তিনি বার বার কলিং বেল বাজাতে থাকেন। তা শুনে বিপদ আঁচ করে দোতলা থেকে ছুটে আসেন রহমানের তিন দাদা। চলে আসেন প্রতিবেশীরাও।
কোনও রকমে ডালিয়ার গায়ের আগুন নিভিয়ে মেয়ে-সহ তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা দু’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডালিয়া এবং তাঁর মেয়ের শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আট বছর আগে বজবজ বিড়লাপুরের বাসিন্দা ডালিয়ার সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল ২৬ বছর বয়সি রহমানের। মৃতার পরিজনদের অভিযোগ, বিয়ের দু’বছর পর থেকে প্রায়ই মত্ত অবস্থায় স্ত্রীর উপরে অত্যাচার চালাত রহমান। দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই ডালিয়া আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই গৃহবধূর মা জানিয়েছেন, এ দিন সকালেও মেয়ে তাঁকে ফোন করে স্বামীর মদ খাওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করেছিল। তাঁর জমানো টাকা রহমান কেড়ে নিয়েছে বলে মাকে জানিয়েছিলেন ডালিয়া। এ-ও বলেছিলেন, তিনি মা-বাবার কাছে চলে আসতে চান। তার কিছু ক্ষণ পরেই ওই ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, রহমান তেমন কোনও কাজকর্ম করত না। প্রায়ই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরত। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রহমানকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও বধূ নির্যাতনের ধারায় মামলা রুজু করে গ্রেফতার করা হতে পারে।