নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের পরিচয় জানতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই দ্বারস্থ হচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, পুলিশের তরফে সুপারের কাছে রবিবারের ঘটনার পুরো রিপোর্ট দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে জানতে চাওয়া হবে, ঘটনার সময়ে কোন কোন জুনিয়র ডাক্তার ডিউটিতে ছিলেন।
পুলিশ জেনেছে, ঘটনার সময়ে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি সাত-আট জন ইন্টার্নও ছিলেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ পাঁচটি ধারায় মামলা করলেও একটি ধারা জামিন অযোগ্য। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশেরই নিচুতলার একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোরপান শাহ-কাণ্ডের মতো এখানেও অভিযুক্তদের বাঁচাতে চাইছে পুলিশ।
কোরপান শাহের ঘটনার ক্ষেত্রেও যে ভাবে গোড়ায় পুলিশকে কোনও সাহায্যই করতে চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, এ ক্ষেত্রেও তেমনই ইঙ্গিত মিলছে বলে অনেকের অভিমত। হাসপাতালের তরফে সোমবার পুলিশকে কোনও তথ্যই দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের সুপার শেখ আলি আমাম জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। এখনই এ ব্যাপারে কথা বলবেন না।
রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বিষয়টিকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করলেও এ দিন অবশ্য বলেন, ‘‘হাসপাতাল নিজেদের মতো করে তদন্ত করছে। তবে যত দূর শুনেছি, সব মিটে গিয়েছে।’’ যেখানে তদন্তের কাজ ঠিক ভাবে শুরুই হল না, সেখানে মিটে যাওয়ার কথা কী ভাবে এল, উঠেছে সেই প্রশ্নও। এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করলে ওই দিনের কর্মরত জুনিয়র ডাক্তারদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্মীদের জেরা করবেন তাঁরা।
গত বছর নভেম্বরে এনআরএসেরই হস্টেলে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল আবাসিক জুনিয়র ডাক্তার-ইর্ন্টানদের বিরুদ্ধে। তখনও প্রথমে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। পরে চাপে পড়ে হাসপাতালের তরফে পুলিশকে কিছু তথ্য দেওয়া হলেও তা অসম্পূর্ণ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার বিকেলে এক ভবঘুরেকে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে মানিকতলা থানার তিন পুলিশকর্মী তাঁকে এনআরএস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারেরা ওই ভবঘুরেকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে অপারেশন থিয়েটারে ড্রেসিংয়ের জন্য পাঠান। মানিকতলার থানার ওই পুলিশকর্মীরা এন্টালি থানায় অভিযোগ করেন, ওটি-তে হাজির জুনিয়র ডাক্তাররা গোড়া থেকেই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছিলেন। ড্রেসিংয়ের পর জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, ওই ভবঘুরেকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু সেই সময়ে হাজির থাকতে হবে ওই তিন পুলিশকর্মীকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই পুলিশকর্মীরা জুনিয়র ডাক্তারদের বলেন, তাঁদের ডিউটি রয়েছে। তাই থাকা সম্ভব নয়। এর পরে ওই ভবঘুরেকে হাসপাতালে ভর্তি করতে অস্বীকার করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এক পুলিশকর্মী সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার তাঁদের হাসপাতালের একটি ঘরে আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, এর পরেই ওই জুনিয়র ডাক্তাররা পুলিশকর্মীদের মারধর করেন। ঘটনাস্থলে থাকা এক মহিলা পুলিশকর্মীকেও নিগ্রহ করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় এক পুলিশকর্মীর মোবাইলও।