সুরক্ষা: ভাইরাসের ভয়ে মাস্ক পরে মুখোশ বিক্রি। বড়বাজারে। নিজস্ব চিত্র
দোলে ছেলের জন্য রাক্ষসের মুখোশ কিনবেন বলে বড়বাজারের একটি দোকানে ঢুকেছিলেন শোভাবাজারের বাসিন্দা দেবরাজ মিত্র। কিন্তু মুখোশ কিনতে গিয়ে তাঁর চোখে পড়ল, অধিকাংশের গায়েই লেখা ‘মেড ইন চায়না’। ফলে ওই মুখোশ কিনবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান দেবরাজ।
চিনে তৈরি সামগ্রী মানেই যে অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক কাজ করছে, গত কয়েক দিনে সংবাদপত্র এবং টিভি দেখে তা জেনে গিয়েছেন ওই দোকানের বিক্রেতা নারায়ণ সিংহ। তবে ওই মুখোশ দেবরাজের হাতে তুলে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আপনি নিশ্চিন্তে নিতে পারেন। চিন থেকে এই মুখোশ এসেছে গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। তখন করোনাভাইরাসের অস্তিত্বই ছিল না।’’ নারায়ণবাবুর কথায় আশ্বস্ত হয়ে শেষমেশ মুখোশ কিনে ফেলেন দেবরাজ। তবে নারায়ণবাবুই জানালেন, এ বার দোল এবং হোলিতে দেবরাজের মতো অনেকেই মুখোশ বা পিচকিরি কিনতে গিয়ে সংশয়ে পড়ছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে চিন থেকে পিচকিরি বা মুখোশ আসা কার্যত বন্ধ। নতুন তো কিছু আসছেই না। যা বিক্রি হচ্ছে, সবই অনেক আগে থেকে মজুত করা।
চিনে তৈরি হওয়া পিচকিরির বিক্রি যে কমে গিয়েছে, তা বললেন বড়বাজারের আর এক রং ও আবির ব্যবসায়ী সমীরণ পালও। তাঁর কথায়, ‘‘দেশি পিচকিরি চলছে ঠিকই। কিন্তু চিনের পিচকিরির চাহিদা ছিল অনেক বেশি।’’
করোনাভাইরাস আতঙ্ক নিয়ে পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলছেন, ‘‘এই ভাইরাস কত দিন বেঁচে থাকতে পারে, তার সঠিক ধারণা এখনও আমাদের নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত কোনও রোগী কোনও জিনিস ধরলে তাঁর শরীরে থাকা ভাইরাস বস্তুটির গায়ে এসে যেতে পারে। তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আদৌ সেই আশঙ্কা আছে কি না, এখনই তা বলা যাচ্ছে না।’’
যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, সর্দি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যদিও বা ছড়াতে পারে, পিচকিরি বা মুখোশের মতো জিনিসের মাধ্যমে তা ছড়ানোর কোনও আশঙ্কা নেই।
নতুন এই ভাইরাসের উপদ্রবে পিচকিরির বিক্রি কমে যাওয়ায় আবিরে বৈচিত্র এনেছেন বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা। এমনই এক জন বাবুলাল মেনট জানালেন, এ বার তাঁরা আবিরের রং নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। জানতে পেরেছেন, চিরকালীন লাল, সবুজ বা গোলাপির বাইরে অন্য রঙের আবির চাইছেন নতুন প্রজন্ম। সেই মতো তাঁরা এ বার চকলেট, চন্দন ও সাদা রঙের আবির তৈরি করেছেন। বাবুলাল বলেন, ‘‘চকলেট রঙের আবিরে চকলেটের গন্ধ পাওয়া যাবে। সাদা আবিরে থাকছে ভ্যানিলার গন্ধ। এ বার করোনা-আতঙ্কে এমনিতেই পিচকিরির চাহিদা কম। তাই এই নতুন আবির প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।’’
প্রতি বছরের মতো এ বারও টালিগঞ্জ থেকে বড়বাজারে আবির ও রং কিনতে এসেছেন খুচরো ব্যবসায়ী অচিন্ত্য মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘খুচরো বাজারেও চিনের পিচকিরির বিক্রি ভাল নয়। তাই বেশি করে আবির কিনেছি।’’ অচিন্ত্যবাবু জানালেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ২০-২৫ বস্তা আবির মজুত করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে চকলেট রঙের আবিরও।
দোল-হোলির পাশাপাশি আসন্ন পুর ভোটের কথা ভেবেও অনেকে আগেভাগে আবির কিনে রাখছেন। এমনই জানালেন বড়বাজারের আর এক ব্যবসায়ী দীপঙ্কর পাল। তিনি বলেন, ‘‘এপ্রিলে তো ভোট হওয়ার কথা। এখন আবিরের চাহিদা বেশি বলে দামও কিছুটা কম। তাই কেউ কেউ এখন থেকেই আবির মজুত করে রাখছেন। সেখানে অবশ্য চকলেট বা সাদা আবির নয়, বেশি বিক্রি হচ্ছে সবুজ ও গোলাপি আবিরই।’’