অপ্রতুল: গড়িয়াহাট বাজারে দেখা নেই ইলিশের। নিজস্ব চিত্র
বর্ষার প্রায় শেষের মুখে। পুজোও দোরগোড়ায়। তবু বাঙালির পাতে নেই ইলিশ! বাজারে যেটুকু রুপোলি শস্য এসেছে, তা-ও বেশির ভাগই হিমঘরে রাখা ছোট আকারের। তেমন সুস্বাদুও নয়। আর ওজনে একটু বেশি হলেই তার দাম হচ্ছে আকাশছোঁয়া।
সাধারণত নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার থেকে ইলিশ কলকাতা এবং শহরতলিতে আসে। ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়তদার বিজয় সিংহ বলছেন, ‘‘গত ২০ বছরে এত কম ইলিশ ওঠেনি।’’ একই সুর দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের গলাতেও। মানিকতলার মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল জানাচ্ছেন, বাজারে ৫০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ৯০০ টাকায়, ৭০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ টাকায় এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ১,৬০০ টাকায়। ‘‘ইলিশ কেনার ইচ্ছে থাকলেও দামের কারণে অন্য মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন অনেক ক্রেতা’’— বলছেন গড়িয়াহাটের এক মাছ ব্যবসায়ী।
কিন্তু কেন নেই ইলিশ?
এর পিছনে জলবায়ুর পরিবর্তনকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টি এস নাগেশ। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য সামুদ্রিক মাছ গতিপথ পরিবর্তন করে গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। ইলিশ জালে না ওঠার পিছনে এটা অন্যতম কারণ। তবে আরও কারণ রয়েছে। এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন।’’ আবার রাজ্য মৎস্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (সদর) সমীর দাস জানাচ্ছেন, চলতি বছরে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনেক সময়েই গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। ফলে জালে ওঠেনি ইলিশ। ডায়মন্ড হারবারের ইলিশ গবেষণাকেন্দ্রের অধিকর্তা সপ্তর্ষি বিশ্বাস দুষছেন বৃষ্টিকে। তাঁর কথায়, ‘‘এ বছর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিও হয়নি। এই বৃষ্টিতেই মোহনা থেকে ইলিশের ঝাঁক নদীতে আসে ডিম পাড়তে।’’
বাংলাদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়াও ইলিশের আকালের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন মৎস্য বিক্রেতারা। মাছ আমদানিকারক সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাসের কথায়, ‘‘তিস্তার জল ভাগাভাগিতে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে ইলিশের রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে মায়ানমার থেকে ইলিশের আমদানি করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হচ্ছে।’’