বেপরোয়া: মাস্ক ছাড়াই বাইরে বেরিয়েছেন মানুষ। বনগাঁ শহরের বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ল এমনই চিত্র। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
৩৩টি নমুনার মধ্যে ৮৭ শতাংশই ওমিক্রন! উত্তর ২৪ পরগনা সম্পর্কে এমনই তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওমিক্রনের কারণেই সেখানে সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, কলকাতার লাগোয়া বলেই উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। কারণ, প্রতিদিনই কলকাতা এবং ওই জেলার মধ্যে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। এই সংমিশ্রণের ফলেই দ্রুত ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের মতো ছোঁয়াচে ভ্যারিয়েন্ট।
ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, বিদেশ থেকে আসা কারও দেহ থেকেই ওমিক্রন এ শহরে প্রথম ঢুকেছিল। তার পরে তা ছড়িয়েছে। এ দিকে, কলকাতা থেকে অসংখ্য মানুষ জেলায় বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানকার লোকজনও প্রতিদিন শহরে যাতায়াত করছেন। এই সংমিশ্রণের জেরেই সংক্রমিতের সংখ্যা এতটা দ্রুত হারে বাড়ছে।
তাঁর কথায়, “জমায়েত বা ভিড় যত বাড়বে, ভাইরাসও তত দ্রুত ছড়াবে। প্রথম সংক্রমণ কলকাতায় হলেও ক্রমেই তা সংলগ্ন জেলাগুলিতে ছড়াচ্ছে। ওমিক্রনের ‘আর-নট ভ্যালু’ (এক জনের থেকে যত জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে) কিন্তু বেড়েছে। এখন এক জনের থেকে অন্তত পাঁচ-ছ’জন আক্রান্ত হতে পারেন।”
গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কল্যাণীতে যে ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ হয়েছে, তার রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি নমুনার মধ্যে ২৯টিতেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছে। যার মধ্যে একটি নমুনাওমিক্রনের উপজাতি ‘বিএ.১’ এবং ২৮টি নমুনা ‘বিএ.২’ গোত্রের। বাকি দু’টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। আরও দু’টির নমুনার প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাজ্যের যে ১৩টি জেলা নিয়ে প্রশাসনের উদ্বেগ রয়েছে, তার মধ্যেও আছে উত্তর ২৪ পরগনা। গত সাত দিনের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে, সংক্রমণের লেখচিত্র কতটা ঊর্ধ্বমুখী। গত ৩ জানুয়ারি (৪ জানুয়ারির বুলেটিনে প্রকাশিত) ওই জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩৯১ জন। যা রাজ্যের মোট আক্রান্তের (৯০৭৩ জন) প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল। সেটিই মাত্র সাত দিনে সাত শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের যে সংখ্যা ছিল, গত ৮ জানুয়ারি সংক্রমিতের সংখ্যা তা পেরিয়ে যায়। ওই দিন, শনিবার (পরের দিন রবিবার, অর্থাৎ ৯ জানুয়ারির বুলেটিনে প্রকাশিত) রাজ্যে মোট আক্রান্তের (২৪,২৮৭) প্রায় ২০.৯ শতাংশ ছিল উত্তর ২৪ পরগনার (৫০৫৩)। রবিবার আচমকাই রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৯২৮৬-তে। সে দিন ওই জেলায় আক্রান্ত হন ৪২৯৭ জন।
অর্থাৎ, মোট আক্রান্তের প্রায় ২২ শতাংশ। এক চিকিৎসকের কথায়, “রবিবার সাধারণত পরীক্ষা কম হয়। তাই সংখ্যাটি কম। কিন্তু জেলায় সংক্রমণের হার যে ঊর্ধ্বমুখী, তা কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার অধীনে বারাসত স্বাস্থ্য জেলায় আক্রান্তের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিধাননগর পুরসভা এলাকা। পাশাপাশি, নিউ টাউন, দক্ষিণ দমদম, উত্তর
দমদম, দমদম, কামারহাটি, বরাহনগর, ব্যারাকপুর, পানিহাটি, মধ্যমগ্রাম-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে উদ্বেগের তালিকায়। পজ়িটিভিটি রেটও রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
যে জায়গায় যত দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে, সেখানকার সংক্রমিতের সংখ্যাও তত তাড়াতাড়ি শিখরে পৌঁছবে, আর সেটাই স্বাভাবিক। এবং ঠিক মতো কোভিড-বিধি মানা না হলে কলকাতার মতো অবস্থা অন্যান্য জায়গারও হবে বলেই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর কথায়, “এখন সংক্রমণের হার এতটাই বেশি, যে জায়গায় আক্রান্তের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল, সেখানেও এ বার তা বাড়তে দেখা যাবে। সর্বত্রই যদি কলকাতার মতো পরীক্ষা হয় কিংবা সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই মানুষ পরীক্ষা করান, তা হলেই বোঝা যাবে, সংক্রমণ জেলাতেও কতটা দ্রুত ছড়াচ্ছে। তাই সংক্রমণ রুখতে গেলে কোভিড-বিধি মানতেই হবে।”