পথ-পারাবার। রাজভবনের গেটের সামনে।
ভরা কোটাল সামলাতে শহরের নিকাশিপথের লকগেট বন্ধ করেছিল পুরসভা। সেই সুযোগে মহানগরকে ভাসিয়ে দিল বুধবার দুপুরের প্রবল বৃষ্টি। যার জেরে উত্তর ও মধ্য কলকাতায় থমকে গেল যানবাহনের গতি, পথেঘাটে নাকাল তুমুল নাকাল হলেন মানুষ।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, চাঁদপাল ঘাট, জ্যাকসন ঘাট, জগন্নাথ ঘাট, নিমতলা এবং শোভাবাজার ঘাট— এই পাঁচটি জায়গা দিয়ে শহরের জল গঙ্গায় পড়ে। কিন্তু দুপুরের ভরা কোটালের জন্য ওই জায়গাগুলির লকগেট বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। তা না হলে গঙ্গার জল উল্টে শহরে ঢুকে পড়তে পারত। আর সেই বন্ধ লকগেটই রুখে দিল প্রবল বৃষ্টির জলকে। জল গঙ্গায় যেতে না পারায় জলের তলায় চলে গেল শহরের একটা বড় অংশ। পরিস্থিতি সামলাতে সন্ধ্যায় অবশ্য লকগেট খুলে দেওয়া হয়।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তর ও মধ্য কলকাতাতেই এ দিন জল বেশি জমেছিল। জলমগ্ন হয়ে পড়ে পূর্ব কলকাতার কিছু কিছু এলাকাও। তার জেরে যান চলাচল ব্যাহত হয়। জল নামতে নামতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেই জল নিমেষে বেরিয়ে যাবে, ব্রিটিশ আমলে এই হিসেবেই কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তাই ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে জল জমবে, এমনটাই দাবি করছেন পুরকর্তাদের একাংশ।
গত সপ্তাহেই বঙ্গোপসাগরে দানা বেঁধেছিল ঘূর্ণিঝড় গোমেন। বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার পরে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে এ রাজ্যে ঢুকেছিল সে। ফলে দুর্যোগ পোহাতে হয়েছিল কলকাতার বাসিন্দাদেরও। সদ্য কাটিয়ে ওঠা সেই আশঙ্কা এ দিনের বৃষ্টির পরে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ফের নিম্নচাপ এল না তো?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর অবশ্য বলছে, নতুন নিম্নচাপের কোনও ইঙ্গিত এখনও নেই। এ দিনের বৃষ্টি বর্ষার স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই হয়েছে। কী সেই নিয়ম?
আবহবিদেরা বলছেন, কলকাতার উপর দিয়ে মৌসুমী অক্ষরেখা সক্রিয় রয়েছে। ফলে পরিমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প রয়েছে। নিম্নচাপের রেশ কাটার পরে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রাও বাড়ছিল। তাপমাত্রা বাড়তেই জলীয় বাষ্প গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠেছে এবং ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছে। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়া বর্ষার স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা খুব বড় এলাকা জুড়ে হয় না। এ দিন যেমন উত্তর ও
মধ্য কলকাতাতেই বৃষ্টির দাপট ছিল বেশি।’’ পুরসভার হিসেবে, দুপুরে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঠনঠনিয়ায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মানিকতলা ও পামারবাজারে বৃষ্টি হয়েছে যথাক্রমে ৭৫ এবং ৭৮ মিলিমিটার।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি নাকাল হয়েছেন উত্তর ও মধ্য কলকাতার মানুষ। ব্যাপক জল জমেছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ঠনঠনিয়া, মহাত্মা গাঁধী রোড, ডালহৌসি, চাঁদনি চক, নিউ মার্কেট এলাকায়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে কোথাও কোথাও, মৌলালিতে হাঁটু জল জমে যায়। জল জমেছিল জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট, নেতাজি মূর্তির কাছেও।
শহরের বিভিন্ন রাজপথে জল জমে যাওয়ায় গাড়ির গতিও স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা কমে যায়। এ দিন দুপুরে কাঁকুড়গাছি থেকে গিরিশ পার্ক আসতে অটোয় চেপেছিলেন এক তরুণী। তিনি বলছেন, ‘‘ওই পথ যেতে আমার এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।’’ রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বাস-ট্যাক্সির গতি প্রায় থমকে গিয়েছিল। তাই অনেকেই বাস-ট্যাক্সি ছেড়ে মেট্রো ধরেছেন। মেট্রো স্টেশনে নেমেও যাত্রীরা বৃষ্টির দাপটে রাস্তায় বেরোতে পারেননি। ফলে মেট্রো স্টেশনে ঢোকা-বেরোনোর পথেও ছিল গাদাগাদি ভিড়। ভরদুপুরে বৃষ্টি নামায় কিছুটা বিপাকে পড়ে স্কুলফেরত ছোট পড়ুয়ারাও। কিশোর পড়ুয়াদের অনেককে অবশ্য জমা জলে ‘উল্লাসে’ মাততেও দেখা গিয়েছে।
ছবি: প্রদীপ আদক এবং সুদীপ্ত ভৌমিক।