হুদহুদের ঝাপটা সামলাতে কোমর বাঁধছে মহানগর

সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টিও হয়েছে। সন্ধ্যার পরে বিদ্যুত্‌ চমকালেও ঝড় অবশ্য হয়নি। কিন্তু শরতের আকাশে এই পরিবর্তনেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’ নিয়ে কলকাতার উদ্বেগের শেষ নেই। অতি উত্‌সাহীরা আলিপুর আবহাওয়া দফতরে ফোন করেছেন ঘন ঘন। জানতে চেয়েছেন, ওই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ঠিক কোথায়। তার জেরে কলকাতায় কিছু হবে কি না। যাঁদের বাড়িতে অনুষ্ঠান রয়েছে, তাঁরা ঠিক করতে পারছেন না কী করবেন। সোমবার অফিস-স্কুল খোলা থাকবে কি না, তা জানতেও ফোন এসেছে সংবাদপত্র দফতরে। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা যত বাড়ছে, মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৮
Share:

গগনে ঘনঘটা। শনিবার শহরে। ছবি: সুমন বল্লভ

সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টিও হয়েছে। সন্ধ্যার পরে বিদ্যুত্‌ চমকালেও ঝড় অবশ্য হয়নি। কিন্তু শরতের আকাশে এই পরিবর্তনেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’ নিয়ে কলকাতার উদ্বেগের শেষ নেই।

Advertisement

অতি উত্‌সাহীরা আলিপুর আবহাওয়া দফতরে ফোন করেছেন ঘন ঘন। জানতে চেয়েছেন, ওই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ঠিক কোথায়। তার জেরে কলকাতায় কিছু হবে কি না। যাঁদের বাড়িতে অনুষ্ঠান রয়েছে, তাঁরা ঠিক করতে পারছেন না কী করবেন। সোমবার অফিস-স্কুল খোলা থাকবে কি না, তা জানতেও ফোন এসেছে সংবাদপত্র দফতরে। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা যত বাড়ছে, মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, হুদহুদ যদি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্থাত্‌, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের আশপাশে আঘাত করে, তা হলে কলকাতার তেমন দুর্ভোগ হবে না। বড়জোর ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বৃষ্টি হবে কয়েক পশলা। ভারী বৃষ্টির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদেরা। তবে শহরে ঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে কলকাতা পুরসভা, বিধাননগর পুরসভা এবং আশপাশের পুরসভাগুলি।

Advertisement

শনিবার রাত থেকেই কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নিয়ম অনুসারে প্রতি শনিবারের মতো এ দিনও বিকেল তিনটের পরেই পুরসভায় ছুটি হয়ে যায়। আজ, রবিবারও ছুটি। কিন্তু এ দিন পুরভবনের চিত্রটাই ছিল আলাদা। কলকাতার পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুরসভার সব বিভাগের কন্ট্রোলিং অফিসার এবং প্রতিটি বরোর এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে কোথাও কোনও অঘটন ঘটলে জরুরি ভিত্তিতে তার মোকাবিলা করা হবে।

মেয়র পারিষদ (ইঞ্জিনিয়ারিং) অতীন ঘোষ জানান, পুরসভার ১৫টি বরো অফিসেই এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা রাতভর থাকবেন। বৃষ্টির দাপটে শহর জলমগ্ন হলে বা ঝড়ে গাছ-বাড়ি ভেঙে পড়লে তড়িঘড়ি তার মোকাবিলায় নামবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “পুরসভার দল সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।” সোমবার সকাল পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা চলবে। হুদহুদের তীব্রতা বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

পুরসভা সূত্রের খবর, পার্ক ও উদ্যান দফতরের অধীনে থাকা গাছ কাটার বিশেষ দলগুলিকেও রাখা হচ্ছে বিভিন্ন বরো এলাকায়। সে রকম কোনও পরিস্থিতির খবর পেলেই দ্রুত তাঁদের কাজে লাগানো হবে। হুদহুদের প্রবল দাপট এ রাজ্যে পড়বে না, আগাম সঙ্কেত এমনটা হলেও পুর-প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। তাঁদের কথায়, বেশি বৃষ্টি হলেই শহরে নানা জায়গায় জল জমে। বেহালা, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জে বেশি কিছু জায়গায় জমা জল সরতে সময় নেয় কয়েক দিন। এ সব দিকে নজর রেখেই অসময়ের ঝড় সামাল দিতে চায় পুরসভা। দেবাশিসবাবু জানান, বরো ভিত্তিক প্রতিটি নিকাশি পাম্প অফিসে রাতভর হাজির থাকবেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। কোথাও জল বেশি জমলে তাড়াতাড়ি তা পাম্পের সাহায্যে বার করার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। অতীনবাবু জানান, জরুরি প্রয়োজনে পুরসভার মেয়র পারিষদেরাও রাস্তায় নামবেন। এলাকায় গিয়ে সব রকম পরিস্থির তদারকি করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিপর্যয় সামাল দিতে তৈরি হচ্ছে বিধাননগর পুরসভা ও রাজারহাট পুরসভাও। বিধাননগর পুরসভা এলাকায় ঝড়ে গাছ পড়ে রাস্তা আটকে যাওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। এ দিকে, আগামী কালই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হতে চলেছে আইএসএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে হাজির থাকার কথা অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে সচিন তেন্ডুলকর, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া-সহ খেলাধুলো ও সিনেমা জগতের বহু নামী-দামি তারকার। অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু রাজনৈতিক নেতারও। পুরসভা সূত্রে খবর, বিধাননগর-নিউ টাউন এলাকায় রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা ও জমা জল নামানোর জন্য আলাদা বাহিনী তৈরি। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা জানিয়েছেন, শনিবারই পাম্পিং স্টেশনগুলি ঠিক আছে কি না, তা দেখে প্রয়োজনীয় মেরামতি করে ফেলা হয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “এমনিতেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিভিআইপি-দের জন্য অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার মধ্যে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা থাকায় আগাম বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।” রাজারহাট পুর-এলাকারও আটটি পাম্পিং স্টেশন খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ওই পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement