পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবার সল্টলেকে।—নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের অনুমতি পাওয়া পথেই এগোচ্ছিল মিছিল। আচমকাই পথ পরিবর্তন করে তারা রাস্তার মাঝে ব্যারিকেড ভেঙে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দফতরের দিকে এগোতে যায়। বাধা দেয় পুলিশ। মিছিলের একটি অংশ ঢুকে পড়ে এসএসসি দফতরের চত্বরে। তার জেরেই মুহূর্তে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এসএসসি দফতর সংলগ্ন এলাকা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা শুরু হয়। তার থেকে হাতাহাতি, লাঠি। ঘটনায় দুই তরুণী-সহ উভয় পক্ষের জনা দশ জখম। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সল্টলেকের এসএসসি দফতরের সামনের ঘটনা। যৌথ ভাবে এই মিছিল ও বিক্ষোভ অবস্থানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। ওই ঘটনায় আহত দুই তরণীকে প্রথমে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল, পরে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বাম নেতৃত্ব। কিন্তু কেন এই অবস্থা হল?
বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতির তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া ও অবিলম্বে এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ শুরু করার দাবি নিয়ে তাঁরা মিছিল করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন। এমনকী, কর্মসূচি পুলিশকে জানিয়ে অনুমতিও নেওয়া ছিল বলে দুই সংগঠনের নেতাদের দাবি। কিন্তু এ দিন দুপুরে বেলেঘাটা-সল্টলেক সংযোগস্থল থেকে মিছিলটি শুরুর পরে এসএসসি ভবনে পৌঁছনোর আগেই তা আটকে দেয় পুলিশ।
মিছিলে থাকা বাম সংগঠন দু’টির নেতাদের দাবি, মিছিলটি সল্টলেকের ইই ব্লকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে গিয়ে শেষ করার কথা ছিল। কর্মসূচি অনুযায়ী, মিছিল শেষ হয়ে ওই জায়গাতেই বিক্ষোভ-অবস্থান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসএসসি অফিসে পৌঁছনোর আগেই একটি ব্যারিকেড করে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। তাঁদের অভিযোগ, ব্যারিকেড ঠেলে আগে মিছিল যেতে চাইলে পুলিশ কোনও প্ররোচনা ছাড়াই আচমকা লাঠি চালায়। এ দিনের কর্মসূচির জন্য ডিউটিতে কোনও মহিলা পুলিশ ছিলেন না বলেই তাঁদের দাবি। অভিযোগ, মিছিল আটকাতে পুরুষ পুলিশই ছাত্রীদের উপরে লাঠি চালায়। এ দিনের ঘটনায় টিনা কংসবণিক এবং মনামি পাল নামের দুই বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন। তাঁদের আরও অভিযোগ, রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন পুলিশকর্তারা। অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। তাদের পাল্টা দাবি, বিক্ষোভকারীরা তাদের ইট মেরেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করেন বিক্ষোভকারীরা।
পুলিশের অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা ভেঙেছেন। কিন্তু ১৪৪ ধারা অমান্য করার পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলের খবর পৌঁছে যায় বিধানসভাতেও। বিকেল সাড়ে ৫টার পরে দুই আহত তরুণীকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দু’জনেরই হাতে-পায়ে ছাড়া তলপেটেও লেগেছে। হাসপাতালে আনার পরে তাঁদের এক্স-রে করা হয়। পরে হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বাম সংগঠনের নেতৃত্ব। সূর্যবাবু জানান, দু’জনের ‘এক্স-রে প্লেট’ তিনি দেখেছেন। কিন্তু সেই এক্স-রে প্লেটের হাল এতটাই খারাপ যে, তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। এমনকী সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই মহিলাকে হাসপাতালের শয্যায় না দিয়ে, ট্রলিতে কেন ফেলে রাখা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তবে এনআরএসে আগামী শনিবারের আগে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সম্ভব নয়। তাই রাতে ওই দু’জনকে স্থানান্তরিত করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে।