স্বাস্থ্য ভবন। ফাইল চিত্র
এসএনসিইউ (সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট)-তে সেপসিসে আক্রান্তের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবাণুনাশকের কাজ এবং পরিচ্ছন্নতায় খামতির কারণেই এমন পরিস্থিতি। সম্প্রতি রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালের সুপার ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ওই পর্যালোচনা বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, সেটাও নথিভুক্ত হয়েছে।
অসুস্থ নবজাতকদের চিকিৎসার জন্য ২০০৩ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এসএনসিইউ তৈরি করা শুরু হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এসএনসিইউ-তে সেই সব সদ্যোজাতকেই রাখা হয়, যাদের জন্মের সময় থেকেই শারীরিক সমস্যা রয়েছে। সংক্রমণের কারণে তাদের সেপসিস হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক বলছেন, “নবজাতকদের মূলত যে তিনটি কারণে মৃত্যু হয়, তার অন্যতম সেপসিস। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম হওয়া ও কম ওজন এবং জন্মের সময়ে শ্বাসকষ্টের কারণেও মৃত্যু ঘটে। তবে, জন্মের সময় থেকেই অসুস্থ বা রুগ্ণ শিশুর সংক্রমণ হলে তা প্রাণঘাতী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলা, মহকুমা, এমনকি মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রেও সেপসিসের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এসএনসিইউ-তে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা এবং ঠিক মতো পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি, ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাতেও ঘাটতি থাকছে। এই বিষয়টিতে জোর দেওয়া এবং এ বার বেসরকারি স্তরেও প্রসূতি-মৃত্যুর অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালেও প্রসূতি-মৃত্যুর বহু ক্ষেত্রেই প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে যথাযথ নজর না দেওয়া, অহেতুক সিজ়ার করা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। এমনকি, গ্রামাঞ্চলেও সেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যকর্তারাজানাচ্ছেন, শহর তো বটেই, জেলাতেও এখন বহু ছোট বা মাঝারি নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। যেখানে বেশি সংখ্যক সিজ়ার হচ্ছে। কিন্তু, সিজ়ারের পরে প্রসূতিকে ঠিক মতো দেখাশোনা না করায় তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। শেষমেশ মৃত্যু হয়।
তাই, ওই পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়েছে, এ বার থেকে সরকারির মতো বেসরকারি হাসপাতালেও প্রসূতি ও সদ্যোজাতের মৃত্যু হলে তার বিশদ তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের ‘মাতৃ-মা’ পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে যদি কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রের খবর, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও সুপারদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে সিজ়ারের ক্ষেত্রে। রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “প্রসূতি ও শিশু-মৃত্যুর হার একেবারেতলানিতে আনাই আমাদের লক্ষ্য। সরকারি হাসপাতালে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালকেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” কী ভাবে পোর্টালে তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে, তা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে।