ছাতার রং বদলেছে শুধু, হকারেরা স্বমহিমাতেই

শহর জুড়ে ফুটপাথে হকারদের মাত্রাছাড়া দাপটে এ বার উদ্বিগ্ন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাঁর নির্দেশে নবান্নে এক বৈঠকে হকার নিয়ন্ত্রণের নীতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। ২০১২ সালে তৃণমূল সরকার হকার-নীতি তৈরি করলেও লাভ হয়নি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কলকাতার ফুটপাথ হকারমুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কিছু জায়গা ছাড়া উচ্ছেদ দূরে থাক, কখনও হকারদের নিয়ন্ত্রণই করা যায়নি। এমনকী, বহু বিতর্কিত ‘অপারেশন সানশাইন’-এর পরেও নয়। শহরের যত্রতত্র জাঁকিয়ে বসা হকার-রাজের হাল নিয়ে শুরু হয়েছে আনন্দবাজারের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ, গড়িয়াহাট।শহর জুড়ে ফুটপাথে হকারদের মাত্রাছাড়া দাপটে এ বার উদ্বিগ্ন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাঁর নির্দেশে নবান্নে এক বৈঠকে হকার নিয়ন্ত্রণের নীতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। ২০১২ সালে তৃণমূল সরকার হকার-নীতি তৈরি করলেও লাভ হয়নি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কলকাতার ফুটপাথ হকারমুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কিছু জায়গা ছাড়া উচ্ছেদ দূরে থাক, কখনও হকারদের নিয়ন্ত্রণই করা যায়নি। এমনকী, বহু বিতর্কিত ‘অপারেশন সানশাইন’-এর পরেও নয়। শহরের যত্রতত্র জাঁকিয়ে বসা হকার-রাজের হাল নিয়ে শুরু হয়েছে আনন্দবাজারের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ, গড়িয়াহাট।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৬
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

বর পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বরযাত্রীর মুখ বা দাপটের কোনও পরিবর্তন নেই। দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-বালিগঞ্জ ফাঁড়ি এলাকার হকার-রাজের ছবিটা কার্যত এ রকমই। হকারেরা এখানে বরযাত্রী। বর শাসক দল।

Advertisement

এক দশক আগে দলীয় শ্রমিক সংগঠন সিটুর চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ‘অপারেশ সানশাইন’-এর বুলডোজারে হকার উচ্ছেদ করেছিল তৎকালীন বাম সরকার।

১৯৯৬ সালে রাতভরের সেই অভিযানের মাস ছয়েকের মধ্যেই গড়িয়াহাটের হকার-রাজ ফিরে আসে স্বমহিমায়। এবং অবশ্যই স্ব-মেজাজে। রাজ্যে পালাবদলের পরে ফুটপাথ দখলের সেই রেওয়াজ বিদ্যুৎগতিতে বেড়ে গিয়েছে বলেই মনে করেন পথচারীরা। সেই সঙ্গেই তাঁরা বলছেন, সিটু-র ছত্রচ্ছায়ায় দাপটে রাজত্ব করা হকারেরা এখন তৃণমূল সরকারের ছাতার নীচে নিশ্চিন্ত।

Advertisement

অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে নামী দোকানের মুখ ঢেকে দিয়েই চলছে ব্যবসা। কে কী বলল, তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ফুটপাথ ধরে চলার সময়ে বরং পথচারীকেই সাবধান হয়ে এগোতে হয়। কোনও ভাবে যেন পায়ের কাছে সাজানো পসরায় ধাক্কা না লাগে। গোলপার্ক থেকে গড়িয়াহাট জংশন আসুন। কিংবা রাসবিহারী মোড় থেকে পায়ে হেঁটে গড়িয়াহাটে। ফুটপাথে কোথাও কোনও ফাঁকা অংশ চোখে পড়বে না। দখলদার দোকানগুলো দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কোনও শপিং মলকে টুকরো টুকরো করে ফুটপাথে লাইন দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পোশাক-জুতো-গয়না থেকে ফল, বাসন থেকে ব্যাগ— এই তল্লাটে কী কী পাওয়া যায়, ফর্দ করতে বসলে কালঘাম ছুটতে পারে। হকারদের দাবি, বাঁধা খদ্দেরের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার ধনী পরিবার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও। কলকাতার অন্যতম লাভজনক ব্যবসাস্থলে বড় দোকানকে টেক্কা দিয়ে সারা বছর চৈত্র সেল স্টাইলে হাঁকডাক করে বেচাকেনার রেওয়াজ। এক হকারের কথায়, এখানে দোকান দিতে পারলে সারা জীবন দুধে-ফলেই কাটবে। বিয়ের বাজারেও বাড়তি কদর পাত্রের! মাসে কয়েক কোটি কাঁচা টাকার এই রমরমা ব্যবসায় শাসক দলের নেতা ও পুলিশের ঝুলিতে কড়ি ফেলেও লাভে তাঁর আঁচ পড়ে না, বলছেন হকারেরাই।

তবে কি এ ভাবেই থাকবে গড়িয়াহাট? সামলে চলবেন শুধু পথচারীরাই? ওই এলাকায় হকার-রাজে লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তৃণমূল সমর্থিত গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘হকারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। একটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সার্ভে করে গিয়েছে। আমরা সব দোকানগুলি একই মাপে তৈরির পরিকল্পনা করেছি। সে ক্ষেত্রে ফুটপাথে ২ শতাংশ জায়গা ছাড় থাকবে। এক-তৃতীয়াংশে দোকান করা হবে।’’ দেবরাজের দাবি, গত দু’বছরে আর কোনও নতুন হকারকে বসতে দেওয়া হয়নি। গোটা এলাকায় প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার হকার রয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর বরো চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রুজির একটা বিষয় তো রয়েছেই। মানবিক প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তবে আমরা সব দোকান ও তার মালিকের ভিডিও ছবি করে রেখেছি। নতুন ভাবে আর ফুটপাথ দখল করতে দেওয়া হবে না।’’ উচ্ছেদ নয়, হকার-রাজ নিয়ন্ত্রণের বিষয়েই ভাবছেন নেতা ও পুরকর্তারা।

বাম আমলে ‘অপারেশ সানশাইন’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিপিএমের দুই নেতা সুভাষ চক্রবর্তী ও কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সুভাষবাবু প্রয়াত। গড়িয়াহাট এলাকায় হকার উচ্ছেদের মুল দায়িত্বে থাকা কান্তিবাবু বলেন, ‘‘ওই সময়েও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ওখানকার ব্যবসায়ীরা সেখানে যাননি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement