জোর-যার: সন্তোষপুর স্টেশনে দোকানের সারি। ছবি: অরুণ লোধ।
স্টেশনে ট্রেন থামতেই যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে নামতে থাকেন। আবার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরাও ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন। প্ল্যাটফর্মে তখন তিলধারণের জায়গা থাকে না। অথচ এরই মধ্যে প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে থাকা জবরদখলকারী দোকানদারেরা চিৎকার করে দোকানের সামনে থেকে যাত্রীদের সরে যেতে বলেন। প্রতিদিন এই ছবিটাই দেখা যায় পূর্ব রেলের বজবজ-শিয়ালদহ শাখার সন্তোষপুর ও টালিগঞ্জ স্টেশনে। যেখানে যাত্রীরা ভিড় সামলে যাতায়াতের পাশাপাশি দোকানিদের চোখরাঙানিও সহ্য করেন।
প্রতি মুহূর্তেই থেকে যায় ঝুঁকি। সরু প্ল্যাটফর্মের বেশিটা জুড়েই রয়েছে দোকানের সারি। আবার বিকেল হলেই সন্তোষপুর প্ল্যাটফর্মের অধিকাংশ জায়গার দখল নেন আনাজ বিক্রেতারা। ট্রেন আসার পরে যে ভাবে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, তাতে যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা।
আরও সমস্যা হয় টালিগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনের দিকে। কারণ সেখানে আপ এবং ডাউনের ট্রেনের জন্য রয়েছে একটি প্ল্যাটফর্ম। তাই যাত্রী সংখ্যাও এখানে বেশি থাকে। প্ল্যাটফর্মের নীচেই রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন। বহু যাত্রী সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করেন। সেখান সারি দিয়ে চা, সরবত, ফল, ঘুগনির দোকান রয়েছে। প্ল্যাটফর্মটি এবড়োখেবড়ো হওয়ায় এখানে হাঁটাই দুষ্কর। তা ছাড়া একসঙ্গে যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে দাবি অনেকেরই।
প্রতি দিন সকালে টালিগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যাত্রীরা নামার পরে তা প্রায় মিছিলের চেহারা নেয়। তখন অনেকেই তাড়াতাড়ি মেট্রো ধরার জন্য ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনে নেমে পড়েন। তবে শুধু টালিগঞ্জে নয়, বাঘা যতীন, গড়িয়া, ঢাকুরিয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ছবিটা একই রকম। যাত্রীদের মতে, এখন বেশির ভাগ প্ল্যাটফর্মে এই সমস্যা দেখা যায়। প্রায় বছর দেড়েক আগে মাঝেরহাট স্টেশনে দখলদার উচ্ছেদ করেন রেল কর্তৃপক্ষ। সে কাজে বিস্তর বাধা এলেও সাফল্যের সঙ্গে কাজ শেষ হয়েছিল। যাত্রীদের তরফ থেকে সাধুবাদ পেয়েছিল রেল। সেই দৃষ্টান্ত সামনে রেখেই রেল অন্য স্টেশনের দখলদার উচ্ছেদে ফের তৎপর হয়েছে।
এক যাত্রী বলেন, ‘‘ট্রেনে ওঠার জন্য দোকানের সামনে দাঁড়ালে দোকানিরা চিৎকার করে সরে যেতে বলেন। মনে হয় আমরাই যেন জায়গা দখল করে রয়েছি।’’ দোকানদারদের অবশ্য দাবি, তাঁদের জন্যই যাত্রীরা অনেক সুবিধা পান। প্ল্যাটফর্মের এই দোকানগুলি থেকেই খাবার জোগান পান যাত্রীরা। পাশাপাশি তাঁরাই প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রাখেন। টালিগঞ্জের এক দোকানদারের বক্তব্য, ‘‘আমাদেরও কিছু করে খেতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলে সেটা আমরা মেনে নেব না।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘এই নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা চলছে। তাঁদের সহযোগিতা পাওয়া গেলে সমাধান সম্ভব।’’