চিংড়িঘাটা মোড়ের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতেও কানে আসে না পুলিশের মাইকে ঘোষণা। প্রতীকী ছবি।
কোনওটি মালখানায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে, কোনওটি অব্যবহারে কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। আবার কোনওটি ব্যবহার হচ্ছে থানার ক্যারম বোর্ডের উপরে আলোর সরঞ্জাম হিসাবে! শহরের গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলিতে ঘোষণার জন্য কেনা পুলিশের ‘হ্যান্ড মাইক’-এর এখন এমনই অবস্থা বলে অভিযোগ।
সভা-সমাবেশ বা ঘেরাও আন্দোলনের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া সেগুলির ব্যবহার তেমন একটা হয় না বলে জানাচ্ছেন খোদ বাহিনীর সদস্যেরা। ফলে শহরের অন্যত্র তো বটেই, চিংড়িঘাটা মোড়ের মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতেও কানে আসে না পুলিশের মাইকে ঘোষণা।
গত বৃহস্পতিবার একটি বেপরোয়া গাড়ি পর পর আট জনকে ধাক্কা মেরে চিংড়িঘাটা মোড়ের কাছে গার্ডরেল ভেঙে ডিভাইডারে উঠে যাওয়ার ঘটনার পরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিধি বলবৎ করতে কবে কড়া হবে পুলিশ? উঠে আসছে পথচারীদের সতর্ক করার ঘোষণা বন্ধ থাকার প্রসঙ্গও। শনিবারও দেখা গেল, চিংড়িঘাটা ও বাইপাসের সংযোগস্থলের সেই অংশে একসঙ্গে পারাপার চলছে পথচারী এবং গাড়ির। উপস্থিত ট্র্যাফিক পুলিশ রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে সিগন্যাল অনুযায়ী হাত দেখিয়ে রাস্তা পারাপার করাচ্ছেন।
বার বার কেন চিংড়িঘাটায় দুর্ঘটনা ঘটছে? নবদিগন্ত ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত ওই এলাকার কর্মীরা মনে করছেন, ওই জায়গায় গাড়ির স্টপ লাইনের সমস্যা রয়েছে। সিগন্যাল লাল হলে এখন যেখানে গাড়ি থামে, তার থেকে নিক্কো পার্কের দিকে আরও কিছুটা ভিতরে গাড়ি থামানো গেলে সুবিধা হয়। কারণ হিসাবে এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ইএম বাইপাসের থেকে এই অংশের রাস্তা এমনিতেই নিচু। ফলে সিগন্যাল হোক বা না হোক, গাড়িকে গতি বাড়িয়ে উঠতে হয়। গতি বাড়ানোর সময়ে আচমকা কোনও পথচারী সামনে চলে এলে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন।’’
আবার যেখানে স্টপ লাইন দেওয়া হয়েছে, তার থেকে জ়েব্রা ক্রসিংয়ের বিশেষ দূরত্ব নেই। ফলে গাড়ি একটু আগে থামলেই পথচারীর যাওয়ার জায়গা থাকে না। কাছেই স্টপ লাইন হওয়ায় হঠাৎ সিগন্যাল সবুজ হলেও গাড়ি দাঁড় করিয়ে পথচারীকে রাস্তা পার করিয়ে দেওয়ার মতো সময় পুলিশও পায় না।’’ অভিযোগ, এমন সমস্যা রয়েছে কলকাতা পুলিশ এলাকার একাধিক রাস্তাতেও।
আরও একটি সমস্যার কথা জানাচ্ছেন বিধাননগরের পুলিশকর্মীরা। তাঁদের দাবি, ওই এলাকায় মহিলা ট্র্যাফিক পুলিশ খুব কম। অনেক সময়েই মহিলা পথচারীরা পুলিশের নির্দেশ মানতে চান না বলে অভিযোগ। এই সব ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশকর্মী থাকলে তিনি প্রয়োজনে মহিলা পথচারীর হাত ধরে আটকাতেও পারবেন।
সমস্যাগুলি নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও কর্তা মন্তব্য করতে চাননি। ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা শুধু জানান, দুর্ঘটনার পরে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশের দুই কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। একাধিক পরিকল্পনা হয়েছে। বড়দিনের আগে যা বলবৎ হবে। লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত কয়েকটি পরিকল্পনা জানানো হয়েছে। কলকাতা ও বিধাননগর কমিশনারেট সেগুলি বলবৎ করবে।’’