একই জিনিস। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা বিক্রি করছে বিভিন্ন দামে। তাদের থেকে সেই জিনিসটি কিনে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলি আরও চড়া দামে তা বেচছে রোগীদের কাছে। এমনকী, এর দুষ্টচক্র থেকে রেহাই পায়নি সরকারি হাসপাতালও।
জিনিসটি স্টেন্ট। সরকারি হাসপাতালেও স্টেন্ট কেনাকে ঘিরে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বারবার ডাক্তারদের আঁতাতের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ রোগীদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে এ বার স্টেন্টকে জীবনদায়ী ওষুধের আওতায় এনে তার সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিচ্ছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, এর ফলে দেশ জুড়ে হৃদ্রোগীদের একটা বড় অংশ কিছুটা আর্থিক স্বস্তি পাবেন।
কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রকের তরফে বৃহস্পতিবার ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’ (এনপিপিএ)-কে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘শিডিউল ১ ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার ২০১৩’-র আওতায় স্টেন্টকে রাখতে হবে। ওই শিডিউলে রয়েছে বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ওষুধ। আচমকা দাম বাড়িয়ে ওষুধ সংস্থাগুলি যাতে ওই ওষুধগুলিকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে না নিয়ে যেতে পারে, সে কারণেই এই ব্যবস্থা। দেশ জুড়ে হৃদ্রোগীর সংখ্যা দিনদিনই বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে স্টেন্টের দাম নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ উঠছিল। বিষয়টির নিষ্পত্তিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হৃদ্রোগ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটিও গড়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সেই কমিটিও দাম বেঁধে দেওয়ার পক্ষেই সুপারিশ করে।
এনপিপিএ-র চেয়ারম্যান ভূপেন্দ্র সিংহ জানান, স্টেন্ট তিন ধরনের। বেয়ার মেটাল, ড্রাগ ইলিউটিং এবং বায়ো-ডিগ্রেডেব্ল। এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে বেয়ার মেটাল স্টেন্ট ১০ হাজারে পাওয়া যায়। ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্ট ১২-১৫ হাজারে। এখন অবশ্য রোগীদের কাছে পুরোটাই ফ্রি। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্টের দাম শুরুই হয় ২২ হাজার টাকা থেকে। তা চড়তে থাকে দেড় লক্ষ, কখনও ২ লক্ষেও।
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল রোগীদের হাসপাতাল থেকেই স্টেন্ট কিনতে বাধ্য করে। সংস্থার দামের উপরে আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা বেশি দামেও স্টেন্ট বিক্রি করে কোনও কোনও হাসপাতাল। এ নিয়ে একাধিক বার স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে সেই সমস্যা কমবে বলে আশাবাদী এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও।
ভূপেন্দ্রবাবু জানান, তিন ধরনের স্টেন্টের ক্ষেত্রেই দাম বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির থেকে দামের বিষয়ে বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই এটি কার্যকরী হবে।
স্বভাবতই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন স্টেন্ট সংস্থা। তাদের বক্তব্য, এর ফলে মানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন রোগীরাই। পাশাপাশি ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্ট তৈরি করে দেশি ও বিদেশি, দুই ধরনের সংস্থাই। ওই দুই ক্ষেত্রে দামের পার্থক্য থাকবে কি না, থাকলেও কতটা, সেই প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছে তারা।
এ রাজ্যে চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, ‘মিড্লম্যানদের’ জন্যই স্টেন্টের দাম চড়তে থাকে। সরকারের এই নীতি কার্যকর করতে হলে তাঁদের আটকাতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দেশে স্টেন্টের দাম লাগামছাড়া হতে শুরু করলেও ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল’-এর দিকটি অবহেলিতই থেকে গিয়েছে। দাম বেঁধে দেওয়ার সঙ্গে মানের দিকেও কড়া নজরদারি জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।