আমাকে সরানোর মন্ত্রী কে, হুঙ্কার সর্বাণীর

পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় তিন আসামির সর্বনিম্ন সাজা চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ক্ষুব্ধ আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাঁকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন সর্বাণী রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

বেহালায় নিজের বাড়িতে সর্বাণী রায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় তিন আসামির সর্বনিম্ন সাজা চেয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ক্ষুব্ধ আইনমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাঁকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন সর্বাণী রায়। পার্ক স্ট্রিট মামলার সরকারি কৌঁসুলির দাবি, অভিযুক্তদের কম সাজা চেয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি। এবং তাঁকে অপসারণ করার ক্ষমতাও আইনমন্ত্রীর নেই। তাঁর এই দাবি অবশ্য মানতে নারাজ রাজ্য প্রশাসন ও আইনজীবী মহলের একটি অংশ।

Advertisement

পার্ক স্ট্রিট মামলায় বুধবার তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে নগর দায়রা আদালত। সে দিনই মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, অপরাধীরা সারা জীবন জেলে থাকুক, এটাই তাঁর কামনা। অথচ পরের দিন সাজার মেয়াদ ঘোষণার সময় আদালতে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, এই তিন জন সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। অতএব তাঁদের সর্বনিম্ন শাস্তি দেওয়া হোক। ঘটনাচক্রে বিচারকও এই অপরাধে সর্বনিম্ন শাস্তি, অর্থাৎ দশ বছর কারাদণ্ড দেন তিন দোষীকে। এর পরেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় রাজ্য জুড়ে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে অভিযোগকারী মৃত সুজেট জর্ডনের পরিবার। (সুজেটের বাবা পিটার শনিবার জানিয়েছেন, সরকারি আইনজীবীর ওই সওয়ালের পর তাঁরা হাইকোর্টের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।) প্রশ্ন ওঠে, প্রশাসনের উপরতলার নির্দেশেই কি সরকারি কৌঁসুলি এমন সওয়াল করলেন? সেই সমালোচনার মুখে রাতে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য দাবি করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং সর্বাণীদেবীর ভূমিকায় সরকার ক্ষুব্ধ। ‘‘ওঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে,’’ বলেন আইনমন্ত্রী।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

Advertisement

এই মন্তব্য শুনে শুক্রবার রাতেই সর্বাণীদেবী বলেছিলেন, ‘‘সরকার ক্ষুব্ধ হলে আমার কিছু আসে যায় না।’’ শনিবার তাঁকে অপসারণ করার ব্যাপারে সরকারের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সরকার আমাকে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসাবে অ্যাপয়েন্ট করেনি। এটা পুলিশ অফিসারদের সুপারিশ এবং তাঁরাই আমাকে ওই পদে চেয়ে এনেছেন। তাই মন্ত্রীর কোনও এক্তিয়ার নেই আমাকে এই মামলা থেকে অপসারণ করার।’’ শুধু পার্ক স্ট্রিট নয়, সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ড, উস্তিতে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার মামলারও বিশেষ সরকারী আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করছেন সর্বাণীদেবী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি শুধু আলিপুর জাজেস কোর্টের সরকারি আইনজীবীদের প্যানেলে রয়েছি। বাকি সব মামলাতেই বিশেষ সরকারি আইনজীবী। এই পদে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল।’’

আইনমন্ত্রীর ঘোষণা ও সর্বাণীদেবীর পাল্টা দাবিকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও আইনজীবী মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারি আইনজীবীদের একাংশ সর্বাণীদেবীর ব্যাখ্যাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, রাজ্যপাল রাজ্যের লিগ্যাল রিমেমব্রান্সের হাতে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি নিযুক্ত করার ক্ষমতা ন্যস্ত করেন। ফলে ওই কৌঁসুলিকে সরকারি ভাবে নিয়োগ করেন লিগ্যাল রিমেমব্রান্স। রাজ্যের যিনি লিগ্যাল রিমেমব্রান্স, তিনি জেলা জজ পদমর্যাদার। জেলা জজকে নিযুক্ত করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাই বিশেষ কৌঁসুলি সরাসরি আইনমন্ত্রীর অধীনে নন।

আইনজ্ঞদের অন্য একটি অংশ অবশ্য এই বক্তব্য মানতে রাজি নন। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁকে অপসারণ করার পূর্ণ অধিকার রাজ্য সরকারের আছে। প্রশাসনিক যাবতীয় নিয়োগ রাজ্যপালের নামেই হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের পরামর্শ ছাড়া স্বাধীন ভাবে কোনও কাজ করার অধিকার রাজ্যপালের নেই। তাই রাজ্যপালের নামে হলেও নিয়োগকর্তা কার্যত রাজ্য সরকারই।’’

আর আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমি যা বলেছি সেটাই ফাইনাল। যিনি ওঁকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন, অপসারণের চিঠিও তিনিই দেবেন।’’ তাঁর দাবি, সর্বাণীদেবীকে যিনি নিয়োগপত্র দিয়েছেন সেই লিগ্যাল রিমেমব্রান্স আইন ও বিচার দফতরের অধীনেই রয়েছেন।

সরকার কি সর্বাণীদেবীকে অপসারণের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে? জবাবে খোলসা করে কিছু বলেননি চন্দ্রিমাদেবী। তবে সর্বাণীদেবীর দাবি, এ দিন রাত পর্যন্ত সরকারের তরফে তিনি কোনও ফোন বা চিঠি পাননি। তাই এখনই পার্ক স্ট্রিট মামলা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। এবং ওই মামলার সওয়ালে তিনি কোনও ভুল করেননি বলেও দাবি সর্বাণীদেবীর। এ দিন বেহালার বাড়িতে নিজের চেম্বারে বসে তিনি বলেন, ‘‘আদালতে আমি ভুল কিছু বলিনি। এক জন অন্যায় করবেন আর এক জন শাস্তি পাবেন— তা হয় না। তাই আমি এদের সর্বোচ্চ শস্তি চাইনি। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ, বয়স দেখে আমার পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি। তার মানে এই নয় যে আমার পর্যবেক্ষণ শুনে বিচারক ওই রায় দিয়েছেন।’’

বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই। শরীরে বাসা বেঁধেছে সুগার। সংবাদিকদের কথা বলার মাঝেই পরিবারের সদস্যরা এসে তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন প্রাতরাশের জন্য। তাঁর সে সবে ভ্রূক্ষেপ নেই। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে? প্রবীণ কৌঁসুলির জবাব, ‘‘ওঁর যদি মামলা নিয়ে আগ্রহ থাকত, তা হলে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। আমি কী বলব, তা নিয়ে কেন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব? আইনে কোথাও বলা নেই, মন্ত্রীর সঙ্গে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’’

তাঁর সওয়ালের জেরেই অবশ্য সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে বিরোধীরা। এ দিন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্ক স্ট্রিট থানা ঘেরাও করা হয়। নোনাডাঙা ট্রাম ডিপো থেকে দুপুর আড়াইটে নাগাদ মিছিল শুরু হলেও পুলিশ তা আটকে দেয় মল্লিক বাজারের মোড়ে। রাস্তার উপরেই অস্থায়ী মঞ্চে সভা শুরু হয়। এসএফআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘ধর্ষকদের আটকাতে পারে না এই সরকারের পুলিশ। কিন্তু ধর্ষণবিরোধী মিছিল আটকায়।’’

অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁকে অপসারণ করার পূর্ণ অধিকার রাজ্য সরকারের আছে। প্রশাসনিক যাবতীয় নিয়োগ রাজ্যপালের নামেই হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের পরামর্শ ছাড়া স্বাধীন ভাবে কোনও কাজ করার অধিকার রাজ্যপালের নেই। তাই রাজ্যপালের নামে হলেও নিয়োগকর্তা কার্যত রাজ্য সরকারই।’’

আর আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমি যা বলেছি সেটাই ফাইনাল। যিনি ওঁকে নিয়োগপত্র দিয়েছেন, অপসারণের চিঠিও তিনিই দেবেন।’’ তাঁর দাবি, সর্বাণীদেবীকে যিনি নিয়োগপত্র দিয়েছেন সেই লিগ্যাল রিমেমব্রান্স আইন ও বিচার দফতরের অধীনেই রয়েছেন।

সরকার কি সর্বাণীদেবীকে অপসারণের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে? জবাবে খোলসা করে কিছু বলেননি চন্দ্রিমাদেবী। তবে সর্বাণীদেবীর দাবি, এ দিন রাত পর্যন্ত সরকারের তরফে তিনি কোনও ফোন বা চিঠি পাননি। তাই এখনই পার্ক স্ট্রিট মামলা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। এবং ওই মামলার সওয়ালে তিনি কোনও ভুল করেননি বলেও দাবি সর্বাণীদেবীর। এ দিন বেহালার বাড়িতে নিজের চেম্বারে বসে তিনি বলেন, ‘‘আদালতে আমি ভুল কিছু বলিনি। এক জন অন্যায় করবেন আর এক জন শাস্তি পাবেন— তা হয় না। তাই আমি এদের সর্বোচ্চ শস্তি চাইনি। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ, বয়স দেখে আমার পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি। তার মানে এই নয় যে আমার পর্যবেক্ষণ শুনে বিচারক ওই রায় দিয়েছেন।’’

বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই। শরীরে বাসা বেঁধেছে সুগার। সংবাদিকদের কথা বলার মাঝেই পরিবারের সদস্যরা এসে তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন প্রাতরাশের জন্য। তাঁর সে সবে ভ্রূক্ষেপ নেই। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে? প্রবীণ কৌঁসুলির জবাব, ‘‘ওঁর যদি মামলা নিয়ে আগ্রহ থাকত, তা হলে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। আমি কী বলব, তা নিয়ে কেন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব? আইনে কোথাও বলা নেই, মন্ত্রীর সঙ্গে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’’

তাঁর সওয়ালের জেরেই অবশ্য সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে বিরোধীরা। এ দিন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্ক স্ট্রিট থানা ঘেরাও করা হয়। নোনাডাঙা ট্রাম ডিপো থেকে দুপুর আড়াইটে নাগাদ মিছিল শুরু হলেও পুলিশ তা আটকে দেয় মল্লিক বাজারের মোড়ে। রাস্তার উপরেই অস্থায়ী মঞ্চে সভা শুরু হয়। এসএফআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘ধর্ষকদের আটকাতে পারে না এই সরকারের পুলিশ। কিন্তু ধর্ষণবিরোধী মিছিল আটকায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement