প্রতীকী ছবি।
ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে এমনিতেই অর্থসঙ্কটে ধুঁকছে রাজ্য পরিবহণ নিগম। এই অবস্থায় লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলকাতার উত্তরে ব্যারাকপুর, চিড়িয়ামোড় এবং দক্ষিণে বারুইপুর, কামালগাজি-সহ একাধিক গন্তব্যে যাত্রীদের ভিড় অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাসের চাহিদাও। তারই মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য ১২০টি বাস কাজে লাগাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। ফলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের জরুরি চাহিদা মিটিয়ে সাধারণ যাত্রীদের পরিষেবায় টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাল, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে যাত্রীদের ভিড় এমনিতেই কিছুটা বেশি থাকার সম্ভাবনা। এই অবস্থায় ডিজেলের জোগানের অভাবে পথে কত সরকারি বাস নামানো যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পরিবহণ নিগমের অন্দরেই। চাহিদা অনুযায়ী কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণের ব্যস্ত জায়গাগুলিতে বাসের জোগান দিতে গেলে শহরের একাধিক রুটে বাস চলাচল প্রায় বন্ধ রাখতে হতে পারে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য। তৈরি হয়েছে একাধিক সেফ হোম। ওই সব জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। সরকারি পরিবহণ নিগম থেকে ১২০টি বাস নিয়ে দিন-রাত ওই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। উত্তরে চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর থেকে দক্ষিণে বারুইপুর, আমতলা, বজবজ-সহ একাধিক গন্তব্যে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই সব বাস।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে এ বার স্বাস্থ্য দফতর বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস নিলেও বেসরকারি বাস একেবারেই নেয়নি। সরকারি বাস নেওয়ার ফলে দফতরের খরচও বাঁচছে। জ্বালানি খরচ ছাড়া অন্য খরচ লাগছে না। করোনা পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ভাবে যাত্রীও কমেছে। পাশাপাশি, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও বহু অলাভজনক রুট বাতিল করেছে রাজ্য পরিবহণ নিগম। আপাতত সেখান থেকেই বাসের জোগান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রায় দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থায় ট্যাঙ্কার পিছু ১০ লক্ষ টাকারও বেশি দাম দিয়ে ডিজেল কিনতে হচ্ছে নিগমকে। পরিস্থিতি এমনই যে, নিগমের ১১টি ডিপোয় সপ্তাহে ন্যূনতম এক ট্যাঙ্কার ডিজেলের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না।
নিগমের আধিকারিকদের অনুমান, গত ৭ মে থেকে স্বাস্থ্য দফতরের পরিষেবা শুরু হলেও সেখান থেকে টাকা পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের ১২০টি বাসের ডিজেল-খরচ ছাড়াও দৈনিক পরিষেবার জন্য আরও ৩০০-৪০০ বাস নামানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে লোকাল ট্রেন বন্ধ হওয়ায় যে সব জায়গায় যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে, সেখানে বাসের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে নিগমের আধিকারিকদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লকডাউন-পর্বে বাস চালানোর ক্ষতিই এখনও সামাল দেওয়া যায়নি। প্রায় নিঃস্ব অবস্থা। অবিলম্বে টাকার সংস্থান না হলে সঙ্কট আরও গভীর হবে।’’ নিগম সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা জানালেও সেই টাকা এখনও এসে পৌঁছয়নি। তার মধ্যে ডিজেলের টানা মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠছে।