অন্য যাত্রীদের সঙ্গে বিমান থেকে নামার পরে ওই প্রৌঢ় যাত্রী এগিয়ে আসছিলেন শুল্ক দফতরের দিকে। আচমকাই দেখা যায়, কাচের দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে তিনি একটি প্যাকেট বাইরে কারওর দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে শুল্ক অফিসারেরা ধরে ফেলেন ওই ব্যক্তিকে। প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে পড়ে সোনার বার।
শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট দশটি সোনার বার ছিল ওই প্যাকেটে। যার বাজারদর ৩৫ লক্ষ টাকারও বেশি। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৭ বছরের ওই যাত্রী দীপক আচার্যকে। তাঁর বাড়ি বেহালায়। রবিবার সকালে তিনি হংকং থেকে ড্রাগন এয়ারের উড়ানে কলকাতায় আসেন।
কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে সোনা পাচারের ঘটনা ইদানীং বেড়েছে। প্রায়শই সোনা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ছেন যাত্রী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্কক থেকে পাচার করা হচ্ছে সোনা। তাই ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানযাত্রীদের উপরে বিশেষ নজর রাখতে শুরু করেছেন শুল্ক দফতরের অফিসারেরা। পাশাপাশি, কয়েক দিন ধরে তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও হংকং থেকেও সোনা আনার ঘটনা ঘটেছে।
দীপকবাবুর বয়স দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন শুল্ক দফতরের অফিসারেরা। তাঁর পাসপোর্ট ঘেঁটে এবং তাঁকে জেরা করে জানা গিয়েছে, যৌবনে ‘কেরিয়ার’ হিসেবে কাজ করতেন দীপকবাবু। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক-হংকং-বাংলাদেশে নিয়মিত মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতেন। তবে গত কয়েক বছর তিনি আর সেই কাজ করতেন না। এ দিন নিজের হাতব্যাগে দশটি সোনার বার নিয়ে তিনি কলকাতায় নামেন। যার ওজন ১ কিলোগ্রাম ১৬৬ গ্রাম বলে জানা গিয়েছে। হংকং থেকে কী ভাবে হাতব্যাগে অতগুলি সোনার বার নিয়ে দীপকবাবু বিমানে উঠতে পারলেন, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শুল্ক দফতরের অফিসারেরা।
কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের চারপাশ কাচে মোড়া। শুল্ক এলাকা ও লাউঞ্জের মাঝখানেও রয়েছে কাচের দেওয়াল। দেওয়ালের নীচে ও উপরের দিকে এবং দু’টি কাচের মাঝে একটু করে ফাঁক রয়েছে। সেই লাউঞ্জেই
রয়েছে বাইরে বেরোনোর গেট। দর্শনার্থীরা অনেক সময়ে ‘ভিজিটর্স’ টিকিট কেটে ওই লাউঞ্জে এসে অপেক্ষা করেন প্রিয়জনকে স্বাগত জানাতে।
শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও এক যুবক লাউঞ্জে ঢুকেছিলেন দীপকবাবুকে স্বাগত জানাতে। শুল্ক এলাকার কাচের ফাঁক দিয়ে তাঁর হাতেই সোনা ভর্তি প্যাকেট তুলে দিতে যান দীপকবাবু। দীপকবাবুর সঙ্গে ধরা হয়েছিল ওই যুবককেও। প্রাথমিক তদন্তে শুল্ক দফতরের অফিসারেরা জেনেছেন, ওই যুবক দীপকবাবুর ছেলে। তবে সরাসরি কোনও রকম প্রমাণ না মেলায় ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়নি। ওই যুবক অবশ্য শুল্ক দফতরের অফিসারদের কাছে দাবি করেছেন, ওই প্যাকেটের ভিতরে আসলে কী ছিল তা তিনি জানতেনই না।
সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে আর এক যাত্রী ঠিক একই ভাবে বিমানবন্দরের শুল্ক এলাকার কাচের দেওয়ালের ওই ফাঁক দিয়ে সোনা পাচারের চেষ্টা করতে গিয়েছিলেন। তিনিও ধরা পড়ে যান শুল্ক দফতরের অফিসারদের হাতে।