Coronavirus

KMC election 2021: ভোট দেওয়ার পাঁচ দিন পরেই জ্বর, হারিয়েছি মাকে

ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য ডাক্তার বা অন্ত্যেষ্টির ব্যবস্থা করতে কাছে ছিল শুধু মোবাইল।

Advertisement

চান্দ্রেয়ী বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

২৮ এপ্রিল, ২০২১। সেই তারিখ, যে দিন বরাবরের জন্য মাকে হারাই। সব থেকে প্রিয় মানুষটির নিথর শরীর কয়েক ঘণ্টা আগলে খাটে বসে ছিলাম। ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য ডাক্তার বা অন্ত্যেষ্টির ব্যবস্থা করতে কাছে ছিল শুধু মোবাইল। কারণ, আমি আর মা, দু’জনেই কোভিড পজ়িটিভ ছিলাম। বাড়ির একতলায় অশীতিপর বাবাকে আলাদা রেখেছিলাম।

Advertisement

অথচ, এমন হওয়ার কথা ছিল না। কোভিড-বিধি মানা নিয়ে আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। লকডাউন পর্বে নিজেদের প্রায় ঘরবন্দি রেখেছিলাম। বাজার আনিয়ে নিতাম। ব্যাঙ্কের মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেরোতাম না। তাল কেটেছিল ১৭ এপ্রিল। ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল, পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় বিধানসভা নির্বাচন চলে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার বাসিন্দা হওয়ায় আমাদের ভোট পড়েছিল ১৭ এপ্রিল। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সব সতর্কতা নিয়েই গিয়েছিলাম কেন্দ্রে। অশীতিপর হওয়ায় বাবার ভোট ১০ এপ্রিল নির্বাচনের কর্মীরা বাড়িতে এসে নিয়ে যান।

আমাদের পরিবারের কারও তখনও কোভিড প্রতিষেধক নেওয়া হয়নি। কারণ, আমার সত্তরোর্ধ্ব মা ২০২০ সালের জুলাই থেকে
সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করার ক্ষমতা হারান। তাঁর পক্ষে কেন্দ্রে গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক দুর্ঘটনায় আমার ফিমার বোন ভাঙে। ফলে আমার পক্ষেও গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়া সম্ভব ছিল না। বৃদ্ধ বাবাকে একা প্রতিষেধক নিতে পাঠাইনি।

Advertisement

১৭ তারিখ দেড় ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করার পরে ভোট দিয়ে বাড়ি আসি। এর পাঁচ দিন পরে, ২১ এপ্রিল মায়ের জ্বর আসে। ২২ তারিখ থেকে আমার।

কাকতালীয় ভাবে বাড়ির উল্টো দিকের প্রতিবেশী দাদাও নানাবিধ উপসর্গ নিয়ে ভুগতে শুরু করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আমি আর মা ওষুধ খেতে থাকি। ২৬ এপ্রিল আমাদের কোভিড পরীক্ষা হয়। ফলাফল পজ়িটিভ আসে। ২৭ তারিখ থেকে মায়ের অবস্থার অবনতি হয়। ২৮ এপ্রিল সকালে বাড়িতেই সব লড়াই শেষ হয়ে যায়। তার দু’দিন আগে মারা যান প্রতিবেশী সেই দাদাও। তাঁরও কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছিল।

এত সতর্ক থাকার পরেও কী ভাবে বা কোথা থেকে এই বিপর্যয় এল, জানি না। তবে কি ওই দেড় ঘণ্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষাটাই কাল হয়েছিল? প্রশ্নটা ঘুরপাক খায়।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে চাই। বাড়িতে অসুস্থ, অশক্ত বয়স্ক থাকলে, ভোটের লাইনে অপেক্ষার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। কারণ আপনি সচেতন থাকলেও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের কর্মীরা কি আদৌ যথাযথ ভাবে মাস্ক পরছেন, হাত জীবাণুমুক্ত করছেন? সেই সঙ্গে ভোট দিতে যাওয়া বাসিন্দারাই বা কতটা করোনা-বিধি মানছেন? ভোট আসবে, ভোট যাবে। প্রিয় মানুষ চলে গেলে আর তাঁকে ফেরানো যাবে না।

একটা কথা মনে হচ্ছে। যে প্রশাসনের জন্য এত ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিতে যাওয়া, তারা কতটা ভাবে মানুষের জন্য? যতটা তৎপরতার সঙ্গে বাড়ি এসে অশীতিপর মানুষের ভোট নেওয়া যায়, ততটা গুরুত্ব দিয়ে কেন বাকিদের কথা ভাবা হয় না? প্রশাসন যদি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে টাইম স্লটের বন্দোবস্ত করত, তবে কি ভিড় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না? এর জন্য তো বিশেষ খরচ করতেও হত না‌।

কোভিডে মৃতার কন্যা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement