প্রতীকী ছবি।
ছ’বছরের মেয়ে সকাল থেকে নিখোঁজ। অথচ বিহার থেকে কলকাতায় বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা বাবা-মা বিষয়টি খেয়াল করেননি। ব্যাপারটি নজরে পড়েনি বাড়ির অন্য সদস্যদেরও। কারণ, চোখের সামনে যাকে তাঁরা খেলতে দেখছিলেন, সে আদতে নিখোঁজ হওয়া শিশুকন্যা নয়। তার যমজ বোন! দু’জনকেই দেখতে হুবহু একই হওয়ায় এক বোনের না থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে অনেক পরে।
ছ’বছরের দুই শিশুকন্যার এই এক চেহারার ভ্রমেই মঙ্গলবার দিনভর হুলস্থুল চলল মানিকতলায়। সেখানকার পরেশনাথ মন্দির থেকে হারিয়ে যাওয়া শিশুকন্যা শেষে উদ্ধার হল উল্টোডাঙার হরিশ নিয়োগী রোডের একটি বাড়ি থেকে। রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখে বাপ্পা দে নামে এক ব্যক্তি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখেন। তিনি খবর দেন মানিকতলা থানাতেও। বাচ্চাটি কার বা কোথা থেকে এল, সেই খোঁজে নেমে পুলিশও খবর পাঠাতে শুরু করে একের পর এক থানায়। শেষে মেয়েকে ফিরে পেয়ে তার মা অনিতা তিওয়ারি বলেন, ‘‘সবাই ব্যস্ত ছিলাম। এক মেয়ে কখন বেরিয়ে গিয়েছে কেউই খেয়াল করতে পারিনি। এক জনকে ঘুরতে দেখে অনেকেই ভেবেছেন অন্য জনও আশপাশেই আছে। বিষয়টি ধরা পড়ার পরে সকলে ভেবেছিলেন সুইটি হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মায়েরা সন্তানকে চিনতে ভুল করেন না। আমিই বুঝতে পারি যে আসলে বিউটি নিখোঁজ।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের নওয়াদা থেকে এ দিন ভোরে হাওড়া স্টেশনে নামেন উপেন্দ্র তিওয়ারি নামে এক ব্যক্তি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও যমজ দুই মেয়ে। বাসে গৌরীবাড়ির পরেশনাথ মন্দিরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান তাঁরা। সকাল ১১টা নাগাদ হঠাৎ উপেন্দ্রর মেয়ে, বছর ছ’য়ের বিউটি কুমারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শোরগোল পড়ে যায় বিয়েবাড়িতে। দেখা যায়, এত ক্ষণ সকলে যাকে বিউটি ভেবে ভুল করছিলেন, সে আদতে সুইটি। বিউটির যমজ বোন। এর পরেই মন্দির এবং আশপাশে শুরু হয় খোঁজ। তবে বিউটির দেখা মেলেনি।
আরও পড়ুন: কাটারি দিয়ে মহিলাকে কোপানোয় অভিযুক্ত রক্ষী
পুলিশ জানায়, প্রথমে মন্দির থেকে বেরিয়ে অরবিন্দ সেতুর দিকে হাঁটতে শুরু করে বিউটি। সেতু পার করে মুচিবাজারের গীতাঞ্জলি ঘড়ির কাছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে থাকে সে। সেখানেই তাকে দেখতে পান বাপ্পা। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটি হিন্দিতে কথা বলছিল। বিহার থেকে এসেছে, নিজের নাম, বাবার নাম বলতে পারলেও কলকাতায় কোথায় গেলে তার বাবা-মাকে পাওয়া যাবে বলতে পারছিল না। তাই আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে যাই।’’
আরও পড়ুন: দেহ তল্লাশি নিয়ে অভিযোগ দায়ের
ওই এলাকাতেই বাপ্পার একটি রকমারি জিনিসের দোকান রয়েছে। উল্টোডাঙার হরিশ নিয়োগী রোডে বাপ্পার বাড়িতে স্ত্রী এবং তাঁদের ১২ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। সেখানে গেলেও প্রথমে বিউটির কান্না কিছুতেই থামছিল না। এর পরে তাকে স্নান করিয়ে কেক, বিস্কুট খাইয়ে নতুন পোশাক পরতে দেন বাপ্পার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা। সেই সময়েই মানিকতলা থানায় ফোন করে শিশু উদ্ধারের কথা জানান বাপ্পা। স্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে বিউটির একটি ছবিও পুলিশকে পাঠান তিনি। পরে বিউটির বাবা-মা মানিকতলা থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানাতে গেলে সেই ছবি দেখেই চিনতে পারেন মেয়েকে। উপযুক্ত কাগজপত্র দেখে এর পরে পুলিশ মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। মানিকতলা থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বাপ্পা নামের ওই ব্যক্তি দারুণ কাজ করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।’’ বাপ্পা বলছিলেন, ‘‘ফুটফুটে বাচ্চা। যা দিনকাল, তাতে রাস্তায় ফেলে তো চলে আসা যায় না।’’
মেয়েটির বাবা-মায়ের খোঁজ এখনই পাওয়া না গেলে কী করতেন?
বাপ্পা বলেন, ‘‘স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে তিন জন মানুষের সংসার তো চলছেই। ওইটুকু বাচ্চা কি বেশি হয়! থাকত মেয়ের মতোই!’’